সন্দীপ সরকার, কলকাতা: সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের বরাত পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে, সাপ্লায়ারের খরচে বেআইনিভাবে দুবাই সফরের অভিযোগ উঠেছিল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে।


শনিবার রাতে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলায় সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে CBI। এর আগে এই হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগেও সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করে এই এজেন্সি। 


আর জি কর হাসপাতালে একাধিক ভেন্ডরকে বেআইনিভাবে সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে এমন অভিযোগ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এই প্রথম নয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রথম অভিযোগ উঠেছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের বরাত পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে, সাপ্লায়ারের খরচে বেআইনিভাবে দুবাই সফরের অভিযোগ উঠেছিল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে।


ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের, অর্থপেডিক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। পরে, তাঁকে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। সেখান থেকে ২০১৭ সালে সন্দীপ ঘোষকে করা হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের MSVP বা মেডিক্য়াল সুপারিনটেন্ডেন্ট ও ভাইস প্রিন্সিপাল। সেই সময়ই তাঁর বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ ওঠে। উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে অভিযোগ করেন প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে, কর্তৃপক্ষের থেকে অনুমতি না নিয়ে, নিয়ম ভেঙে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, দুবাই সফর করেছিলেন সন্দীপ ঘোষ।


আরও পড়ুন, ইচ্ছে করেই হাসপাতালে দেরিতে আসেন ওসি! দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের দাবি উঠতেই তড়িঘড়ি শেষকৃত্য? রিমান্ড লেটারে CBI-এর বিস্ফোরক দাবি


এই সফরের খরচ বহন করেছিলেন একজন নির্দিষ্ট সাপ্লায়ার। অভিযোগ, টেন্ডারে কারচুপিতে বরাত পেয়ে যায় 'মা তারা এন্টারপ্রাইজ' নামে একটি সংস্থা। যার কর্ণধার অভীক চট্টোপাধ্যায় এবং এবং বিপ্লব সিং। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল আর জি কর হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগেও এই বিপ্লব সিংকে CBI ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। তদন্ত চলছে মা তারা এন্টারপ্রাইজের ভূমিকা নিয়েও। 


এর পাশাপাশি, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, বেলেঘাটার বাড়ি তৈরির সময় সাপ্লায়ারদের থেকে ঘুষ নেন তিনি। এছাড়া সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস না করার শর্তে সরকারের থেকে ভাতা নিয়েও, নিয়মিত একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্র্যাকটিস করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগপত্রের কপি পাঠানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশানারের কাছেও।


সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর জি কর হাসপাতালেও একইরকম দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন, সেখানকার প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। মেডিক্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট ও ভাইস প্রিন্সিপাল থাকাকালীন সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রধানদের না জানিয়ে ITU-এর বেডে রোগী ভর্তির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখা-সহ ১০ দফা অভিযোগ করেছিলেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের 8 বিভাগীয় প্রধান।


অভিযোগ করা হয় যে, বেড ফাঁকা পড়ে থাকা সত্ত্বেও, মরণাপন্ন রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। ITU-এর বেড বুকিং করা হচ্ছে সুপারের অফিস থেকে। যে পদে তখন ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। সব মিলিয়ে দিনে দিনে লম্বা হচ্ছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা।


 



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে