সুনীত হালদার, হাওড়া: কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের নামকরণ তাঁর নামেই। শুক্রবার সেই কিংবদন্তি চিকিৎসক রাধাগোবিন্দ করের ১৭৪তম জন্মদিন ছিল। তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দেশ জুড়ে যখন নিন্দার ঝড় উঠেছে, হাসপাতালের প্রতিষ্ঠানাতার জন্মদিন উদযাপনেও সেই ঘটনার ছায়া পড়ল। দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হওয়ার পাশাপাশি, গোটা ঘটনায় তাঁরা অসম্মানিত বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন রাধাগোবিন্দের পরিবারের সদস্যেরা। (RG Kar Case)
বাংলার চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রাণপুরুষ হিসেবে গন্য হন রাধাগোবিন্দ। তাঁর নামেই আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালের নামকরণ। ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সেই হাসপাতালের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। ভূরি ভূরি দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগও উঠে আসছে লাগাতার। এর ফলে অসম্মানিত বোধ করছেন রাধাগোবিন্দের পরিবার। শুক্রবার ছিল তাঁর ১৭৪তম জন্মদিন। কিন্তু তা উদযাপন করতে গিয়েও বার বার উঠে আসছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কথা। (RG Kar Doctor Murder Case)
হাওড়ার সাঁতরাগাছির বেতড়ে কর পরিবারের বাড়িতে গতকাল রাধাগোবিন্দের জন্মদিন উদযাপিত হয়। সেখানেও হাসপাতালে ঘটে যাওয়া জঘন্য় ঘটনার প্রসঙ্গ এবং তার বিচারের দাবি শোনা যায়। পরিবারের সদস্য স্বাগতা ঘোষ বলেন, "আজ এমন একটা ঘটনার জন্য গোটা পৃথিবী আর জি করকে চিনল। এটা কাম্য ছিল না। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই সবাই ওঁকে চিনছেন, জানছেন। আমাদের হাওড়াতেই অনেকে জানতেন না যে বেতড়ে ওঁর বাড়ি। এখন জানার পর সকলে আসছেন, দেখছেন।"
পরিবারের আর এক সদস্য সৌমিত্র কর বলেন, "ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমাদের। যেভাবে ঠিক মনে হয়, সেভাবে তদন্ত করা উচিত তদন্তকারীদের। প্রকৃত দোষী যারা, তাদের চিহ্নিত করে যদি শাস্তি দেওয়া যায়, তাতে খুশি হব আমরা এবং সেটাই হওয়া উচিত। রোজ তদন্তে কী উঠে আসছে, রিপোর্ট কী বলছে, আমরাও সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।"
আর জি কর মেডিক্য়ালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের নৃশংস ঘটনার পর বসে থাকতে পারেননি রাধাগোবিন্দের পরিবারের সদস্য়রা। গত ১৯ অগাস্ট প্রতিবাদে পথে নামেন তাঁরাও। ১৮৫০ সালের ২৩ অগাস্ট বেতড়ের বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন রাধাগোবিন্দ। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি পাশ করেন তিনি। ১৮৮৬ সালে ডাক্তারি পড়া শেষ করে দেশে ফেরেন। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে দেশের মানুষের চিকিৎসার জন্য় আলাদা হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন তিনিই। সেই তাগিদ থেকেই তৈরি করেন এশিয়ার প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল, পরে যা আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিশে যায়। স্বাধীনতার পরের বছর তার নাম রাখা হয় রাধাগোবিন্দ করের নামে।
প্রত্য়েক বছর রাধাগোবিন্দ করের জন্মদিন অনাড়ম্বরভাবেই পালন করে তাঁর পরিবার। তবে দিনটি বিষাদে কাটল তাঁদের।