টানা ৪২ দিনের আন্দোলন। রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রেখে, গান্ধীবাদী পথে আন্দোলন করে, রাজনৈতিক দলের থেকেও বেশি সফল হলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। হাজার প্রতিকূলতা থেকে ধেয়ে আসা আক্রমণকে উপেক্ষা করে শেষমেষ নিজেদের দাবি ছিনিয়ে আনলেন। পাশে পেলেন বাংলা ও দেশের অসংখ্য় মানুষকে। সমর্থন উপচে পড়েছে বিদেশ থেকেও। অনেকে বলছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা যা করেছেন, ইদানীংকালে কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলও তা করে দেখাতে পারেনি। কেউ কেউ আবার বলছেন, রাজনীতির ছোঁয়া এড়িয়েছেন বলেই, যে কোনও রাজনৈতিক দলের থেকে সফল আন্দোলন করে দেখাতে পেরেছেন এই জুনিয়র ডাক্তাররা। দল-মত নির্বিশেষে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে গোটা শহর। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আগে শুক্রবার সিজিও অভিযান করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। এদিন এবিপি আনন্দ-র ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন-এ যোগ দিয়েছিলেন , আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতো। অনিকেতের প্রশ্ন রাখা হয়, তাহলে কি এখন আন্দোলনের অভিমুখ একটু ঘুরল। প্রথম দিন থেকে রাজ্য সরকার ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব ছিলেন তাঁরা। এদিন কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আগে তাঁরা সিবিআই দফতর অবধি মিছিল করলেন দ্রুত তদন্ত ও বিচার চেয়ে।
অনিকেত জানান, ' শুরু থেকেই আমরা যেটা চেয়েছিলাম, বিচার, সুবিচার চেয়েছিলাম। প্রথম থেকে পুলিশি তদন্তের গতিপ্রকৃতির যে জায়গাগুলো আমরা দেখতে পারছিলাম না, তার সঙ্গে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, সেমিনার রুম ঠিকমতো কর্ডন করা হচ্ছে না কেন, সেমিনার রুমের উল্টো দিকের ঘর ভাঙার জন্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার যে নোটিস, সেই বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের প্রশ্ন ছিল, বিচার প্রক্রিয়া কেন এত বাধা পাবে ? আমরা তো সুবিচারই চেয়েছি। এই বাধার কেন প্রয়োজন হল? সেই জায়গা থেকে আমাদের দাবি উঠেছে। এছাড়াও আমাদের যেটা দাবি ছিল, দ্বিতীয় অভয়া যাতে না হয়, তিলোত্তমা যাতে না হয়, সে-জন্য কলেজের নিরাপত্তা মজবুদ করা। পাশাপাশি সারা রাজ্যজুড়ে যে থ্রেট কালচার শুরু হয়েছে, তাও বন্ধ করা দরকার। সেই সঙ্গে যেটা প্রাথমিক দাবি, সেই বিচারের দাবির কথা তো ভুলে যেতে পারি না।'
CBI তদন্তে কি আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা ? অনিকেত জানালেন, সঞ্জয় রায়, সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি-কে গ্রেফতার নিঃসন্দেহে একটি তদন্তে অগ্রগতি। তবে চেষ্ট মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের মধ্যে যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, তিনি তাঁর ছাত্রজীবন কেন, সিনিয়র চিকিৎসকরাও এমন ঘটনা পরিলক্ষিত করেছেন কি না তাঁর জানা নেই। এই অন্যায়ের যদি বিচার না হয়, অপরাধী যদি শাস্তি না পায়, তাহলে এত আন্দোলনকারী, এত সাধারণ মানুষ যাঁরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা চরম আশাহত হবেন।
আরও পড়ুন :