কলকাতা: মুখোমুখি বসিয়ে সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডলকে জেরা করতে চায় সিবিআই। কিন্তু আজই সন্দীপ-অভিজিৎকে হেফাজতে পাচ্ছে না সিবিআই। 'আপনারা কি নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জেলে গিয়ে জেরা করেছেন? যা তথ্য পেয়েছেন, তার ভিত্তিতে আগে জেলে গিয়ে জেরা করুন। জেলে গিয়ে জেরায় অসহযোগিতা পেলে আবার কোর্টে আসুন', আর জি কর-মামলায় সিবিআইকে জানিয়ে দিল শিয়ালদা কোর্ট।


আর জি কর-কাণ্ডে ধৃৃত সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বেআইনি নির্মাণের নতুন অভিযোগ প্রকাশ্যে। তিন বছর আগের একটি অভিযোগ সামনে এনেছেন সন্দীপের প্রতিবেশী। বেলেঘাটা আইডির অবসরপ্রাপ্ত আপার ডিভিসন ক্লার্ক সুপ্রিয়া মুখোপাধ্যায়। সন্দীপ ও তার বাড়ির মাঝে একটি পাঁচিল ছিল। অভিযোগ, ২০২১ সালে জুন মাসে ছোট পাঁচিলটি ভেঙে বেআইনিভাবে ১৫ খুটের পাঁচিল নির্মাণ করেন সন্দীপ ঘোষ। বেলেঘাটা থানার পুলিশের সামনেই পাঁচিল নির্মাণ হলেও কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন। পুরসভা, তৎকালীন স্থানীয় কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হলেও সুবিচার পাননি সুপ্রিয়া মুখোপাধ্যায়। ১১ সেপ্টেম্বর আর জি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ করেন অংশুমান সরকার নামে এক ব্যক্তি। সেই মর্মে সন্দীপ ঘোষের বাড়িতে নোটিসও দিয়েছে পুরসভা। 


এই মামলার শুরু থেকেই বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা। ২২ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের শুনানির সময়, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছিলেন, টালা থানার পুলিশকে প্রথমে ফোন করে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় এক মহিলা চিকিৎসককে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ডেপুটি সুপার পরিবারের সদস্যদের ফোন করে বলেন, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ। পরে বলা হয় সুইসাইড করেছেন। ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেটা হাসপাতাল। আধিকারিকরা সবাই চিকিৎসক। তাঁরা দেখলেই তো বুঝতে পারবেন, কোনটা অজ্ঞান, কোনটা সুইসাইড আর কোনটা খুন। তাহলে কেন সংজ্ঞাহীন বা সুইসাইড বলা হল? এভাবে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য কী ছিল?


আপত্তি জানিয়ে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, কোনও কিছুই পরিবর্তন করা হয়নি, পুরো ঘটনার ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। এরপর প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলে ঘটনার তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষণে দেরি করা হয়েছে। খুনের জায়গা থেকে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ওই দিনই সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ঘটনার পর পরই কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ FIR করেনি? অধ্যক্ষেরই তো অবিলম্বে FIR করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি কেন? ওই সময় অধ্যক্ষের সঙ্গে কে যোগাযোগে ছিলেন? ইস্তফা দেওয়ার পরই কী করে অধ্যক্ষকে অন্য মেডিক্যাল কলেজে নিয়োগ করা হল?


আরও পড়ুন,'কলকাতা পুলিশের দুই-একজন অফিসার তোলাবাজিতে যুক্ত, পুলিশের কলঙ্ক', সরব খোদ TMC বিধায়ক


তার আগে ১৩ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্টের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিল, দেহ কি রাস্তায় পড়ে ছিল? সুপার বা অধ্যক্ষ  অভিযোগ করেননি কেন? আর কিছু বলতে হবে না, ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে এসেছে। কলকাতা পুলিশের উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন করেছিল, সন্দীপ ঘোষের বয়ান রেকর্ড করেননি কেন? তিনি তো ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান। কেন তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন? কিছু একটা মিসিং লিঙ্ক আছে। এরপর তদন্তে নেমে সেই সন্দীপ ঘোষকেই ধর্ষণ-খুন মামলাতেও গ্রেফতার করে সিবিআই।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।