উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : এ বাংলার কারা উৎসবে ফিরবেন , কারা ফিরবেন না তাঁরা জানেন না। কিন্তু এ বাড়িতে উৎসবের আলো আর কোনও দিন জ্বলবে না।  বাড়িতে আর কোনওদিন পুজো হবে না । আর কোনওদিন ঢাক বাজবে না । আর সন্তান ফিরবে না। আর মায়ের আরাধনাও হবে না। আজ আর জি করের নিহত চিকিৎসকের বাড়ি জুড়ে শুধুই শূন্যতা। হাহাকার। চরম অনিশ্চয়তা। আর বিচারের আশা। 


পুজো যত এগিয়ে আসছে ভিড় করে আসছে মেয়েটার স্মৃতি। বাবা - মায়ের চোখে শুধুই জল। ফিরে আসছে পুরনো স্মৃতি।  'গতবছর পুজোর মধ্যেই হাসপাতালে ছুটে যেতে হয়েছিল। রোগী দেখাই ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাই নবমীর রাত ও দশমীর সারা দিন কাটিয়েছিলেন হাসপাতালেই। ওর রোগীই ছিল প্রথম, সব ফেলে ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালে...' 


মা জানালেন, 'একদম ছোট বেলা থেকেই মানুষকে ভীষণ ভালবাসত। ডাক্তার হওয়া স্বপ্ন ছিল। আমাদের টালির বাড়ি ছিল, সেখান থেকে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব। তারপর MBBS হল। আমরা চেয়েছিলাম বিয়ে দেব। বলল না মা, আমাকে MD হতেই হবে। আগে ২-৩ বার ব়্যাঙ্ক করেছিল, ভাল হয়নি। মেডিসিন খুব ইচ্ছে। বসেইনি কাউন্সেলিংয়ে। ওর পরে যারা রাঙ্ক করেছে, তারা বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু ওর টার্গেট - মেডিসিন চাই আমার। আরজি করে মেডিসিন পেয়ে খুব খুশি হয়েছিল, কিন্তু বুঝিনি সেখানেই ওকে বলি হয়ে যেতে হবে। ওর স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে, চোখ দিয়ে বেরিয়ে এল রক্ত। কতগুলি দুষ্কৃতীর হাতে তাকে বলি হতে হল, কেন যে তার সঙ্গে এটা হল, ৫৪-৫৫ দিন পরও জানি না কেন হল।' 


বাড়ির দুর্গা চলে গেছে। এবার আর আসবে না প্রতিমা। তবে পুজোর দিনগুলিতে বাড়ির সামনেই অবস্থান মঞ্চ বানাবেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। নিহত চিকিৎসকের বাবা - মা জানালেন, ' আমরাও অবস্থান করব। এত লোক যদি আমাদের জন্য রাস্তায় নামতে পারে, আমরা কেন নামতে পারব না। কী অসুবিধা আছে। আমরাও সামনে একটা মঞ্চ বানিয়ে পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত থাকব।  তারাও (ডাক্তাররা) আসবেন বলেছেন। আমাদের এখানে মেডিক্যাল ক্যাম্প বানাবেন বলেছেন।'


নিহত চিকিৎসকের মায়ের অভিযোগ, '৮ তারিখ আমার মেয়ে ডিউটিতে গিয়েছিল, কিন্তু ৯ তারিখ যে ফোন এসেছিল, সেটা কষ্টের দিন। রাস্তায় বলেছিল তাড়াতাড়ি আসুন, কিন্তু আমাদের বসিয়ে রেখে তথ্যপ্রমাণ যেভাবে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছিল, দর্শক হিসেবে দেখেছিলাম, কিন্তু কোনও বাবা-মা-কে যেন দেখতে না হয়। প্রশাসন কাকে আড়াল করতে চাইল। প্রশাসনের শুভবুদ্ধ উদয় হোক। ' 


মঙ্গলবার থেকে নতুন করে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের পাশেই আছেন নিহতের মা-বাবা। বললেন, 'ওরাও তো সমস্যায় রয়েছে। আমার মেয়ে চলে গেছে। এত জঘন্য অত্যাচার, তারপরও প্রত্যেকটা মেডিক্যালে বন্ধ হয়নি। যেমন সেবা করে, ওদেরও প্রাণ আছে। আমরাও চাইব না ওদের সঙ্গে ঘটুক।' 


আরও পড়ুন :


দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেল বাংলা