কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডের আঁচ অনুভূত হচ্ছে গোটা দেশে। দফায় দফায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, মিছিল চলছে। দাবি উঠছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগেরও। সেই আবহে ফের সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আর জি করের নির্যাতিতার মা। পুলিশ ও সরকারের ভূমিকায় অনাস্থা প্রকাশের পাশাপাশি, মমতা আন্দোলন আটকানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুললেন। (RG Kar Doctor Death Case)


রবিবারও প্রতিবাদের জেরে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কলকাতা। যুবভারতীর সামনে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় প্রতিবাদীদের। সেই আবহেই সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন নির্যাতিতার মা। মেয়ের এই পরিণতির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। পুলিশ এবং প্রশাসনের তরফে কোনও সহযোগিতা মেলেনি বলেও জানান। (RG Kar Medical Student Death Case)


এদিন সরাসরি মমতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নির্যাতিতার মা। তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে বলেছিলেন, 'আপনার বাড়ি যাব, সব ঠিক হয়ে যাবে, দোষীদের তাড়াতাড়ি ধরে ফেলব'। কিন্তু কিছুই তো দেখতে পেলাম না! এখনও পর্যন্ত কেউ ধরা পড়ল বা ক্লু পাওয়া গেল বলে দেখলাম না তো!"



আর জি করের ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের গ্রেফতারিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ নির্যাতিতার মা। বরং এই ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের ভিতরের লোকজন যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। নির্যাতিতার মায়ের বক্তব্য, "এক জন ধরা পড়েছে, কিন্তু ওকে আমি মনেই করছি না। ভিতরের কেউ না থাকলে, ও কী করে জানল আমার মেয়ে ওখানে আছে?"


দফায় দফায় আন্দোলন, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির যে সব ঘটনা সামনে আসছে, তার জন্যও মমতাকে কাঠগড়ায় তোলেন নির্যাতিতার মা। তাঁর কথায়, "আমার তো মনে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ বন্ধের চেষ্টা করছেন। এখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন, যাতে মানুষ প্রতিবাদ করতে না পারেন।" এমনকি পুলিশ ভাল কাজ করেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী যে দাবি করেন, তা-ও উড়িয়ে দেন নির্যাতিতার মা। পুলিশ একেবারেই ভাল কাজ করেনি বলে দাবি তাঁর। 


নির্যাতিতার মায়ের দাবি, গত শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ফোন করে মেয়ে অসুস্থ বলে প্রথমে জানানো হয় তাঁদের। পরে আত্মহত্যার তত্ত্ব দেওয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছলে দুপুর ৩টে নাগাদ সেমিনার হলেই মেয়ের দেহ দেখতে দেওয়া হয়। সেখানে মেয়ের পরনে প্যান্ট ছিল না। জামা ছিল, শরীর ছিল চাদরে মোড়া। চোখ, মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল। 


নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, মেয়ের ওই অবস্থা দেখে তিনি গোড়াতেই জানান, এটা আত্মহত্যা হতে পারে না। অনেক কষ্ট করে মেয়েকে ডাক্তা করেছিলেন তাঁরা। সেই মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। মেয়ে মানসিক চাপে ছিল, কাজের চাপ ছিল, কিন্তু তার বাইরে কিছু তাঁকে জানাননি মেয়ে। শুক্রবার সারাদিন হাসপাতালে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ছিলেন। তাঁর কাছ থেকেও সহযোগিতা মেলেনি বলে দাবি করেছেন নির্যাতিতার মা। নির্যাতিতার মায়ের দাবি, কী করে তাড়াতাড়ি বিষয়টি মেটানো যায়, তড়িঘড়ি পোস্টমর্টেম করিয়ে দেহ দাহ করা যায়, সেই চেষ্টাই করছিলেন সিপি।