আশাবুল হোসেন, অর্ণব মুখোপাধ্য়ায় ও সমীরণ পাল, কলকাতা : মহিলাদের নাইট ডিউটি প্রসঙ্গে মুখ্য়মন্ত্রীর মুখ্য় উপদেষ্টার একটি মন্তব্য় ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। মঙ্গলবার ধর্ষণ বিরোধী বিল পেশের পর মহিলাদের নাইট ডিউটি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্য়মন্ত্রী। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।


আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় রাজ্য়জুড়ে এখন প্রতিবাদের ধ্বনি ! নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে রাত দখলে নেমেছেন মহিলারা। নিরাপত্তার দাবিতে মশাল, মোমবাতি হাতে রাতের রাস্তা দখল করেছেন তাঁরা। ধর্ম-বর্ণ-বয়স নির্বিশেষে মহিলাদের একটাই দাবি, দিন হোক কিংবা রাত...ঘরে হোক কিংবা বাইরে...সবসময় নিরাপদ পরিবেশ। এই আবহেই মহিলাদের নাইট ডিউটি প্রসঙ্গে মুখ্য়মন্ত্রীর মুখ্য় উপদেষ্টার একটি মন্তব্য় ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। মুখ্য়মন্ত্রীর মুখ্য় উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছিলেন, "যেখানে সম্ভব, যতদূর সম্ভব মহিলাদের নাইট ডিউটি থেকে স্পেয়ার করবার চেষ্টা হবে। জোড়ায় জোড়ায় কাজ করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।"

এই আবহেই এবার ধর্ষণ বিরোধী বিল পেশ করতে গিয়ে মহিলাদের নাইট ডিউটি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্য়মন্ত্রী। তিনি ঘোষণা করেন, 'মহিলারা যত কম সম্ভব ১২ ঘণ্টা ডিউটি করবে। যদি এমার্জেন্সি থাকে তার ডিউটি ডাক্তার বাড়াবে। আমরা এই কারণে করেছি, মেয়েদের সুরক্ষার জন্য। যারা রাতে কাজ করতে চায় তারা অ্য়ালাউড। রাতে যারা কাজ করবে তাদের ফুল প্রোটেকশনের জন্য। রাতে যদি কেউ কাজ করে, তাদের ফুল প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য এই রাত্রিসাথী করা হয়েছে।'


এ প্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা বলেন, 'আজ এই যে মেয়েরা আছে, তাঁদের হয়তো রাত ১০টা-১১টার সময় ইন্টারভিউর প্রয়োজন পড়তে পারে, যাবে না সেখানে ? তাহলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে বসে থাকতে হবে। ছেলে-মেয়ের বৈষম্য উনি দেখিয়ে দিচ্ছেন। এটা অবশ্যই সরকারের অক্ষমতা। কেন মেয়েদের সুরক্ষা দিতে পারছেন না ? দুর্নীতিগুলো সামনে আনার চেষ্টা করুন।'


অন্যদিকে নির্যাতিতার মা বলেন, 'আজ ডাক্তারি যাঁরা পড়ছেন, তাঁরা কী ছেলে, কী মেয়ে...বিচার করা উচিত নয়। মেয়েরা ১২ ঘণ্টা ডিউটি করবে...ছেলেরা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করবে...এটা তো মেয়েদের আরও ছোট করা হচ্ছে। বৈষম্য। মেয়েদের আরও হেনস্থা করা হচ্ছে এটা। এটা কেন হবে ? এই বিল অসমর্থন করব।'

বিল পাস, আইন কী হবে? বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'আপনাকে গ্য়ারান্টি দিতে হবে এটা যেন এখনি লাগু হয়।'

এনিয়ে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের জবাব, 'বিরোধী দলনেতা কতগুলো কথা বললেন, রুলসে পরিণত করার দায়িত্ব কার্যকর হবে কি? মাননীয় রাজ্য়পালকে বলুন এই বিলটায় সই করে দিতে। তারপরে যদি কার্যকর না হয়, তার দায়িত্ব আমাদের। তার দায়িত্ব আমাদের।' তাঁর সংযোজন,
'ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, ১০ থেকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ক্ষেত্রবিশেষে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। আমরা এটাকে করছি, আমৃত্য়ু সশ্রম কারাদণ্ড থেকে ...এমনকী প্রাণদণ্ড। এইটুকুই আমরা পরিবর্তন করেছি।'

এবার সবার নজর রাজভবনের দিকে।