কলকাতা: মেলের পাল্টা মেল। শর্তর-পাল্টা শর্ত। সব শেষে শনিবারের পর এদিন ফের কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। হল বৈঠকও। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, 'আন্দোলনের চাপে সিপির পদত্যাগের দাবি মানা হয়েছে। ৫ দফা দাবি শোনা হলেও কিছু মানা হয়েছে, কিছু মানা হয়নি। আমরা খুশি নই।'
জুনিয়র চিকিৎসকরা বৈঠক শেষে একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, 'স্বাস্থ্য ভবন সাফাই অভিযানে নেমেছিলাম। সম্পূর্ণ হয়নি এখনও তা। স্বাস্থ্য সচিবকে সরায়নি এখনও। আমরা এখনও আলোচনা সদর্থক তখনই বলব যখন মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কমিশনার, স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের সরানোর কাজ সম্পন্ন করবেন। আমাদের সুরক্ষা নিয়ে আরও কিছু পদক্ষেপ করার আছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন টাস্ক ফোর্স গঠন করবেন। সেই বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। আমরা বৈঠকের পথ খোলা রেখে দিলাম। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে তাকিয়ে আছি।'
এদিন মমতা বলেন, 'আগামীকাল বিকেল ৪টার পরে কলকাতা পুলিশে বদল আনব। কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে বদলানোর সিদ্ধান্ত সরকারের। কাল বিকেল ৪টার পরে আরও কিছু রদবদল আনব। বিনীত যেখানে কাজ করতে চেয়েছেন, সেখানে পাঠানো হবে'। এদিন জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার আবেদনও করেন মুখ্যমন্ত্রীর।
মঙ্গলবার আর জি কর মেডিক্যালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন মামলার তৃতীয় শুনানি। তার কয়েক ঘণ্টা আগে, এই বৈঠক শেষে প্রতি মুহূর্তে ছিল নাটকীয় মোড়। এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের দ্বিতীয়বার কালীঘাটে বৈঠকের জন্য ডেকে ই-মেল পাঠিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ভাবে, চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, পঞ্চম ও শেষবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁদেরকে ডাকা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার নবান্ন ও শনিবার কালীঘাটের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল, আন্দোলনকারীদের দাবি মতো লাইভ স্ট্রিমিংয়ে সরকারপক্ষের রাজি না হওয়া। এই পরিস্থিতিতে সোমবার প্রথম ই-মেলে মুখ্যসচিব স্পষ্ট করে দেন, আপনাদের (আন্দোলনকারী) আগের দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, এই বৈঠকের কোনও ভিডিয়োগ্রাফি বা সরাসরি সম্প্রচার হবে না, যেহেতু বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পরিবর্তে বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উভয়পক্ষের সই থাকবে।
পাল্টা সরকারকে ৩ দফা শর্ত দিয়ে মেল পাঠান জুনিয়র ডাক্তাররা। ৩টি শর্ত হল - উভয় পক্ষের পৃথক ভিডিওগ্রাফারকে দিয়ে বৈঠকের ভিডিওগ্রাফি করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, সভার সম্পূর্ণ ভিডিও ফাইল সভার পরপরই WBJDF প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। যদি তাও সম্ভব না হয়, উভয় পক্ষের তরফে সভার সম্পূর্ণ প্রতিলিপি সহ মিনিট রেকর্ড করা হবে এবং লিপিবদ্ধ করা হবে এবং বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের স্বাক্ষর-সহ বৈঠক শেষে হস্তান্তর করা হবে।
জুনিয়র ডাক্তারদের একটি শর্ত মেনে নিয়ে সরকারের তরফে পাঠানো মেলে বলা হয়, বৈঠক শেষে মিনিটসে দু'পক্ষেরই প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর থাকবে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং আলোচনার চুক্তি অনুযায়ী দু'পক্ষের কাছেই তার কপি দেওয়া হবে। আর এরপরই ফের মুখ্যসচিবের কাছে মেল যায় জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে। সেখানে জানানো হয়, ২ জন পেশাদার অনুবাদককে নিয়ে তাঁরা বৈঠকে যাবেন। সেই পরিকল্পনা মতোই, বিকেল ৫টা ৫০ নাগাদ বাসে করে কালীঘাটের উদ্দেশে রওনা দেন আন্দোলনকারীরা।