অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: পুলিশের ব্যারাকে আস্তানা গেড়ে বসলেও, আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় আসলে ভবানীপুরের ভাড়াটে। তবে যেমন তেমন ভাড়া বাড়ি নয়, শম্ভুনাথ পণ্ডিতের হেরিটেজ বাড়ির ভাড়াটে সঞ্জয়, যে বাড়িতে এখনও থাকেন শম্ভুনাথ পণ্ডিতের পরিবারের সদস্যরা। ঘৃণ্য অপরাধে অভিযুক্ত সঞ্জয়ের সঙ্গে শম্ভুনাথ পণ্ডিতের ঠিকানা জড়িয়ে যাওয়ায়, আক্ষেপ ঝরে পড়ছে তাঁদের গলায়। ( RG Kar Medical Student Death)
৫৫ বি শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিট। রাস্তার নাম শুনলেই বোঝা যায়, কার নামে বাড়ির নামকরণ। আর এই বাড়ির বাসিন্দা কে ছিলেন, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, যাঁকে আজও এক ডাকে চেনে বাংলা, এই কলকাতার বুকে যাঁর নামে রয়েছে একটা আস্ত সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে এই ঠিকানা। (Kolkata Medical Student Death)
শুনতে অস্বস্তি হলেও, এই বাড়িরই ভাড়াটে আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়। এখন এই বাড়িতে রয়েছেন সঞ্জয়ের মা। ১৮৬৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হন শম্ভুনাথ পণ্ডিত। তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হয়েছিলেন। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত, আমৃত্যু, ওই পদে ছিলেন তিনি। এখনও এই বাড়িটিকে পণ্ডিত-বাড়ি বলেই চেনেন স্থানীয় মানুষজন। বাড়িতে যে ঘরটিতে বসতেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত, যেখানে তাঁর কাছে আইনি পরামর্শ নিতে যেতেন মানুষ জন, তার মাথার উপর ছাদটি আর নেই। ভেঙে পড়েছে আরও বেশ কিছু অংশ। আর এহেন এক ঠিকানা হঠাৎ করে এখন শিরোনামে উঠে এসেছে ঘৃণ্য অপরাধে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের কারণে।
তাই শম্ভুনাথ পণ্ডিতের পরিবারের সদস্য মমতা পণ্ডিত বলেন, "কী নিয়ে বিখ্যাত হওয়ার কথা ছিল, আর কী নামে হল। খারাপ লাগছে।" শম্ভুনাথ পণ্ডিতের এই বাড়িটি কলকাতার অন্যতম একটি হেরিটেজ সম্পত্তি। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার অংশুমান সরকার বলেন, "যে বাড়িগুলি হেরিটেজের মধ্যে পড়ে, কর্পোরেশনের লোক গিয়ে গ্রেডেশনের জন্য ইনস্পেকশন হয়। আমি যখন ওই বাড়িতে ইনস্পেকশনে গিয়েছিলাম, সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বলেছিল, আরজি করে কাজ করে। তখন দেখেছিলাম, ভাড়াটিয়াদের মধ্যে ওর একটা প্রভাব আছে।"
শম্ভুনাথ পণ্ডিতের নামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে সেবা। আর তাঁর ভিটেতেই কি না এতদিন ধরে বেড়ে উঠেছেন মানবসেবীর খুনে অভিযুক্ত!