কলকাতা : আন্দোলনের ঢেউ রাজ্য ছাড়িয়ে গিয়ে আছড়ে পড়েছে দেশজুড়ে। চাপে পড়ে শেষমেশ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সন্দীপ ঘোষ। তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মেডিক্যাল সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠকে। তাতেও অবশ্য শান্ত করা যায়নি আন্দোলনকারী পড়ুয়া চিকিৎসকদের। এই পরিস্থিতিতেই সোমবার পদত্যাগ করলেন সন্দীপ ঘোষ। তাঁর বিরুদ্ধে এবার সুর চড়াল আইএমএ বেঙ্গলস ও জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস।


তাদের তরফে সাংবাদিক বৈঠককারী চিকিৎসক বলেন, "আপনারা জানেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তিনদিন আগে কী ঘটনা ঘটেছে। আমরা স্তম্ভিত। আমার মনে হয় আপনারা সবাই। পৃথিবীর কোথাও এরকম হয়েছে বলে আমার জানা নেই। একটি মেয়ে সে নাইট ডিউটি করছে, সেই নাইট ডিউটির সময় তার কর্মক্ষেত্রে ঢুকে তাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। সত্যি বলছি, কোনও দিন এরকম শুনিনি। গা শিরশির করছে। আর বলার ভাষা নেই। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ যে উনি বলেছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করেন। কিন্তু, তার সঙ্গে এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, আজ পুলিশ কমিশনার বলছেন আমরা এখনও বুঝতে পারছি না এটা একজনের কাজ, না একাধিক জনের। বিশ্বাস করতে পারেন ? তিনদিন অতিবাহিত তারপরে পুলিশ কমিশনার বলছেন এটা একাধিক জনের কাজও হতে পারে। আমরা কোথায় রয়েছি ? একটা ডিউটি রুম, চারদিকে সিসি ক্যামেরা থাকার কথা। তারপর আমাদের এটা শুনতে হচ্ছে।" 


তিনি আরও বলেন, "এর আগে ওখানে প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন শুদ্ধোধন বটব্যাল। তাঁর সময়ে পূর্ব ভারতে সর্বশ্রেষ্ঠ মেডিক্যাল কলেজের তকমা পেয়েছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ। বিগত তিন বছর ধরেও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ খবরের শিরোনামে । কীসের জন্য ? প্রিন্সিপ্যাল ধর্নারত পড়ুয়াদের লাথি মেরে বেরিয়ে গেছেন তার জন্য। তারসঙ্গে বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট নিয়ে দুর্নীতির কারণে। কখনো নিয়ম বহির্ভূতভাবে টেন্ডার করে লোকজনকে স্টল পাইয়ে দেওয়ার জন্য। আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য। যাঁরা তাঁকে সমর্থন করে না, সেইসব ছেলে-মেয়েকে ফেল করানোর জন্য। তাঁর 'পোষা কিছু ছাত্র' কলেজে মাতব্বরি-দাদাগিরি করে পুরো কলেজটাকে একটা শ্মশানের মতো জায়গায় পরিণত করেছে তার জন্য। সেইজন্য আজ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ বিখ্যাত। সেই বিখ্যাত মানুষ সন্দীপ ঘোষ। ডাক্তার বলব না। সরি ! কোনও ক্ষেত্রে ওঁকে ডাক্তার বলব না। তাহলে আমরা নিজেদের ডাক্তার বলতে পারব না। সেই সন্দীপ ঘোষ আজ নাটক করলেন। তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর নাকি এত অন্তরের ব্যথা ! ওঁর ইস্তফা নিয়ে নাকি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ওঁ (সন্দীপ ঘোষ) খুব দুঃখ পেয়েছে। ওঁর ইস্তফা আমরা নিচ্ছি না। ওঁকে আমরা অন্য জায়গায় পাঠাব। আমাদের দাবি, কোনও বদলি নয়, তথ্যপ্রমাণ বিকৃতির জন্য ওঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় তদন্ত করতে হবে। কেন ? এক নম্বর, আজ ম্যাডাম নিজে বলেছেন ছাত্রীর বাড়িতে পুলিশ থেকে ফোন গিয়েছিল যে, আত্মহত্যা করেছে। একজন বাচ্চা মেয়ে সে সেমিনার রুমে ছিল, এরজন্য ফরেন্সিক মেডিসিন এক্সপার্ট হওয়ার দরকার নেই। আত্মহত্য়া করলে তার গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন, শরীরে জামা থাকে না, এমনটা হতে পারে না। আজ অবধি শুনিনি। কিন্তু, সেটা দেখে আরজি কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই পুলিশকে জানিয়েছে। সেই আরজি কর কর্তৃপক্ষের মাথা কে ? আমরা কি এটা বিশ্বাস করি যে, প্রিন্সিপ্যালকে না জানিয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে ? সেটা যদি হয়, এমনিও প্রশাসনে ওঁর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। সেটা যদি হয় যে, ওঁকে জানিয়ে বা উনি পুলিশকে বলেছেন আত্মহত্যা, প্রথম কথার জবাব দিন আত্মহত্যা কথাটা কোথা থেকে এল ? কেন আত্মহত্যা ? বলতে পারতেন, অস্বাভাবিক মৃত্যু। এর জবাব কে দেবে ? আপনি দেবেন। আপনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যধারা হওয়া উচিত। জোড় হাত করে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, পদত্যাগ নয় , বদলি তো দূরের কথা বরখাস্ত করুন ওঁকে। কোনও মেডিক্যাল কলেজে এই সমাজবিরোধী ব্যক্তিটাকে ঢুকতে দেবেন না। তার জন্য যত বড় আন্দোলন করতে হয় আমরা রাজি।"


প্রসঙ্গত, পদ ছাড়লেও বিরুদ্ধগোষ্ঠীকে দায়ী করে গেছেন সন্দীপ ঘোষ। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক চক্রান্তেরও অভিযোগ তুলেছেন। সন্দীপ ঘোষ বলেন, 'পড়ুয়ারা এটাই চেয়েছিলেন যে আমি পদত্যাগ করি। মানুষও এটাই চেয়েছিলেন। আসলে আমার বিরুদ্ধে একটা রাজনৈতিক খেলা চলছে। '


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।