কলকাতা: আর জি কর মামলায় কেস ডায়েরি চাইলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। দুপুর ১ টার মধ্যে কেস ডায়রি দিতে হবে বলে জানালেন প্রধান বিচারপতি। সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগপত্র এবং নতুন নিয়োগপত্রও চাইলেন। বিচারপতি বলেন, "আন্দোলনরত চিকিৎসকদের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তাঁদের এক সহকর্মীকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে নৃশংসতার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তাতে চিকিৎসকদের অবস্থানকে অন্যায্য বলা হয় যায় না।" (RG Kar Medical Student Death) সন্দীপ ঘোষের আচরণ অভিভাকসুলভ ছিল না বলেও মন্তব্য় করে আদালত।


আর জি কর নিয়ে এদিন জনস্বার্থ মামলাগুলির শুনানি শুরু হয় আদালতে। সেখানে গোটা ঘটনায় আর জি কর কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির টিএস শিবজ্ঞানম। রাজ্যকেও ভর্ৎসনা করেন তিনি। মঙ্গলবার শুনানি চলাকালীন নিহত তরুণী চিকিৎসকের পরিবারের তরফে আদালতে সওয়াল করছিলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাটার্য। তিনি জানান, পরিবারকে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর দেহ দেখতে দেওয়া হয়। পুলিশের তরফে ফোন করে বলা হয়, সর্বোচ্চ মহল থেকে এই ঘটনার মীমাংসা করে নিতে বলা হয়েছে। কাউকে বিষয়টি না জানাতেও বলা হয়। সিবিআই তদন্তের আর্জিও জানায় নির্যাতিতার পরিবার। এই ঘটনা একজনের দ্বারা ঘটেনি বলেও দাবি করেন বিকাশ রঞ্জন। যদিও রাজ্য জানায়, একাধিক ব্যক্তি যুক্ত থাকলে, আঘাতের ধরন ভিন্ন হতো।  রাজ্য জানায়, স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত হচ্ছে, পরিবারকে প্রতিনিয়ত তদন্ত সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। (Kolkata Medical Student Death)


এতে ভর্ৎসনার সুর শোনা যায় প্রধান বিচারপতির গলায়। তিনি বলেন, "প্রথমে পরিবারকে বলা হয় মেয়ে অসুস্থ। পরে বলা হয়, আত্মহত্যা করেছেন মেয়ে। পরিবারকে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে আত্মহত্যার কথা বলা হলে, বুঝতে হবে পরিবার সঙ্গে নেই। এটা তো কোনও ব্যক্তি জেলের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন,তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মৃত বলে জানা গেছে তেমন নয়। মৃতা তো হাসপাতালেই ছিলেন, তিনি তো সেখানকার অংশ। চিকিৎসকরা তাদের সারাজীবন উৎসর্গ করেন।" (Calcutta High Court)


এতে রাজ্য সরকার জানায়, যে নম্বর থেকে পরিবারের কাছে ফোন গিয়েছিল, সেটা পুলিশকে দেওয়া হোক। কোন নম্বর থেকে ফোন গিয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে রাজ্য। রিপোর্ট পেশ করতে বুধবার সকাল পর্যন্ত সময়ও চায় রাজ্য। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বলেন, "বিকেল ৩টের মধ্যে সন্দীপ ঘোষকে বলুন ছুটির আবেদন করে লম্বা ছুটিতে চলে যেতে। না হলে আমরা প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেব।"


আর জি করের ঘটনায় সন্দীপের ভূমিকা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন আন্দোলনকারীরা। তাঁর পদত্যাগ এবং বিকেলে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্বে তাঁকে বসানো নিয়েও শুরু হয়েছে সমালোচনা। সেই নিয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যালের চিকিৎসকরাও আন্দোলনে নেমেছেন। এমত অবস্থায় প্রধান বিচারপতি বলেন, "সন্দীপ ঘোষের বয়ান রেকর্ড করেননি কেন? তিনি তো ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান। কেন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন? আপনারা তাঁকে এভাবে পুরস্কৃত করতে পারেন না। পদত্যাগ করার চার ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ফের দ্বায়িত্ব দেওয়া হল। সন্দীপ ঘোষ কি এতটাই প্রভাবশালী? কিছু একটা মিলছে না।"


আর জি কর নিয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তাঁর আইনজীবী দাবি করেন, একজনের দ্বারা এই অতিমানবীয় ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার বলছেন, ফাঁসি দিলেও কিছু যায় আসে না। প্রতি দিন প্রমাণ নষ্ট করা হচ্ছে। পুলিশ প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে এবং হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে বলেও দাবি করেন শুভেন্দুর আইনজীবী। 


কলকাতার পুলিশ কমিশনার আর জি কর মামলার তদন্ত তদারকি করছেন। তাঁকে এই মামলা থেকে আপাতত সরানোর পক্ষে এদিন সওয়াল করেন মামলাকারী ফিরোজ এডুলজি। তিনি বলেন, "আজ দুপুর ২টোর মধ্যেই কেস ডায়েরি জমা দেওয়া হোক। কামদুনি মামলায় যুক্ত ছিলাম আমি। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এই মামলাও কামদুনির পথে এগোবে। ছাড়া পেয়ে যাবে সমস্ত অপরাধী। পুলিশ আধিকারিক বিনীত গোয়েল কামদুনি মামলাতেও ছিলেন। তাঁকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হোক। তিনি কামদুনি মামলায় কী করেছেন, আমরা জানি।" 


সন্দীপের বিরুদ্ধেও মারাত্মক অভিযোগ তোলেন ফিরোজ। তাঁর দাবি, ২০২৩ সালে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে যে ছাত্ররা আওয়াজ তুলেছেন, তাঁদের Ragging এর শিকার হতে হয়েছে। মেডিক্যাল বর্জ্য দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তিনি যুক্ত। কেউ তাকে ছুঁতে পারবে না।