কলকাতা: আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের (RG Kar News) প্রতিবাদে আজ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (Calcutta Medical College) গণ কনভেশনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই ফের এই ঘটনা নিয়ে ফের মুখ খুলল টলিপাড়া। সঙ্গে ছিলেন একাধিক আন্দোলনকারী চিকিৎসকও। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা জীতু কমল, সোহিনী সরকার, বাচিকশিল্পী মীর (Mir) সহ অনেকেই। 'এই আন্দোলন সহজে থামার নয়', স্পষ্ট মন্তব্য মীরের।


আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে গণ কনভেনশনে মীর কী বললেন?


মীর এদিন বলেন, 'অনেক অনেক শুভেচ্ছা এই আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার মনে হয় হাততালিটা নিজেদেরই দিতে পারেন, কারণ এরকম আন্দোলন আমাদের শহর দেখেনি। যে প্রতিষ্ঠানের এই অডিটোরিয়ামে আমরা বসে রয়েছি, শুধু এটাই নয়, আমাদের শহরে এরকম আরও কিছু মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে সিট পাওয়া তো অনেক পরের কথা, দরজা দিয়ে ঢুকতেও অনেকের বুক দুরু দুরু করে। কারণ এগুলি দেশের শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্যকর্মীদের সিট। আজকে আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনে নেমেছেন অন্যান্য ডাক্তারি সংগঠনও।'


তিনি বলে চলেন, 'আমি এখানে আমার শিল্পী বন্ধুদের কোনও ইউনিয়ন বা কোনও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিত্ব করছি না। ডাক্তার কিঞ্জল নন্দের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত নিই এখানে আসব, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। আমাকে আপনাদেরই মতো একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে ভাববেন যে এই জল হাওয়া উপভোগ করি। আমার স্ত্রী একজন ডাক্তার। যবে থেকে এই ঘটনা ঘটেছে, প্রত্যেকদিন সকাল থেকে রাত এই একই জিনিস নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছি। যার ফলে বাড়িতে একটা বেশ নেতিবাচক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি এছাড়া আর কোনও উপায় নেই। আমার কন্যা, এখানে কয়েক মাস থেকে, গতকালই পড়াশোনা করতে দিল্লি চলে গেল। অদ্ভুত লাগে, আজ থেকে ৩ বছর আগে যখন গ্র্যাজুয়েশনের পড়াশোনা শুরু করতে দিল্লি গিয়েছিল, আমরা বারবার ওকে সাবধান করেছিলাম যে ওখানে কিন্তু যখন তখন সিনেমা দেখতে চলে যাবে না। শহরটা কিন্তু দিল্লি, কলকাতা নয়। যার তার সঙ্গে  ঘুরতে চলে যাবে না। শহরটা কিন্তু দিল্লি, কলকাতা নয়। যেখানে সেখানে আড্ডা মারতে মারতে দেরি করবে না, শহরটা কিন্তু দিল্লি, কলকাতা নয়। আমাকে এবার আমার মেয়ে প্রশ্ন করেছে, 'তুমি এবার কী বলবে?' আমি কোনও উত্তর দিতে পারিনি। তা সত্ত্বেও, আমার এখনও মনে হয়, অনেকটা ইতিবাচকতা বাকি রয়েছে। অনেক মানুষ যাঁদের কোনওদিনও মেরুদণ্ড ছিল না, তাঁদের মেরুদণ্ড অবশেষে দেখা যাচ্ছে, বাইরে থেকেও। আবার অনেক মানুষ, যাঁদের মেরুদণ্ড ছিল বলে আমরা বিশ্বাস করতাম, তাঁদের এখন L5 L7-এ কিছু একটা গণ্ডগোল দেখা যাচ্ছে, তাঁরা ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে সত্যি কথাটার পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। মানুষকে কেউ তদন্ত করতে বলছে না, জবাবদিহি করতে বলছে না, শুধু পাশে দাঁড়াতে বলছে। যে মিটিং মিছিল নিয়ে আমাদের শহর জেরবার থাকত একটা সময়, আমরা উষ্মা প্রকাশ করতাম, বিরক্ত হতাম, আজকে সেই মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থেকেও এই সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন, কারণ তাঁরা জানেন এটা বৃহত্তর স্বার্থে।'


 



আরও পড়ুন: RG Kar News: আমাদের যা দেখানো হচ্ছে সেটাই দেখছি, নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছি : জীতু কমল


শেষে তাঁকে বলতে শোনা যায়, 'পরিশেষে শুধু এটুকু বলি, আমার বেশ কিছু শিল্পী বন্ধু, যাঁরা সিনেমা টেলিভিশন থিয়েটার জগতের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের কাছে জনগণ জবাব চাইছেন কিন্তু তাঁরা কোনও জবাব দিতে পারছেন না। কারণ দুর্ভাগ্যবশত তাঁদের টিকিটা অন্য কোথাও বাঁধা। এবং সেই টিকির জোর আছে বলতে হবে। যেটা দুর্ভাগ্যবশত তাঁরা বুঝতে পারছেন না যে জনগণ কেন এই রোষ দেখাচ্ছেন তাঁদের প্রতি, কারণ খুব সহজ, তাঁরা প্রত্যেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। মানুষ তাঁদের এই বিশ্বাস থেকেই ভোট দিয়েছেন যে আমাদের সমস্যার কথা কোথাও একটা এই মানুষগুলো গিয়ে সংসদে বলবেন। কিন্তু ওই যে, টিকিটা অন্য কোথাও বাঁধা। ছেড়ে দিন তাঁদেরকে। তাঁদের ট্রোল করার থেকে নিজেদের মাথায় গেঁথে নিন 'you have a role to play'। এই আন্দোলন এতদিন দেখে স্পষ্ট আমরা বুঝে গেছি, এটা কয়েকদিনের আন্দোলন নয়, হুজুগ নয়, এটাকে যাঁরা হুজুগ বলছেন, যাঁরা ছোট করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের সামনে দেখলে থুতু ছেটাবেন তাঁদের মুখে।'


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।