ঝিলম করঞ্জাই, সন্দীপ সরকার ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : স্বাস্থ্য়ভবনের সামনে থেকে ধর্না তুলে নিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশিকা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দেন মুখ্যসচিব। যেখানে অন ডিউটি রুম থেকে CCTV, প্যানিক অ্যালার্ম, হেল্পলাইন চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও, এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা।


স্বাস্থ্য়ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না শেষ হচ্ছে আজ, শুক্রবার। শনিবার থেকে জরুরি পরিষেবায় ফেরার কথা ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে সেই সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তাররা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিচারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন জারি থাকবে। সেই সঙ্গে রাজ্য় সরকারকেও কার্যত ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছে তারা। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন, "অভয়ার ন্যায়বিচার কিন্তু আমরা ছিনিয়ে আনবই। আমাদের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য, অভয়ার বিচার। আমাদের চোখ থাকবে আগামী ২৭ তারিখের হিয়ারিংয়ের উপর। যদি এই দাবিগুলি সম্পর্কিত কোনও সুনির্দিষ্ট ডিরেক্টিভ না হয়, আমরা মনে রাখতে বলব প্রয়োজন হলে আমরা আবার পূর্ব কর্মবিরতিতে যেতে পারি।" আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো বলেন, "রাজ্য প্রশাসনকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, তারা যেন এটা কোনওভাবেই ভেবে না নেয় যে আন্দোলন একটা জায়গায় তারা মিটিয়ে নিতে চাইছে।"


অপর এক আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার আশফাকুল্লা নাইয়ার বক্তব্য, "অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া বাকি আছে আমাদের। সেই উত্তরগুলো আমরা চাইতে থাকব। তাই, অবস্থান এখানে বন্ধ হলেও, আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।"

সোমবার কালীঘাটে, মুখ্য়মন্ত্রীর বাসভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। তারপর চাপের মুখে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্ত, স্বাস্থ্য় অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক এবং স্বাস্থ্য়শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস হালদারকে সরানোর কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বুধবার সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে ফের নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। আলোচনা ফলপ্রসূ হলেও, শেষ দিকে গিয়ে তাল কাটে। দু-পক্ষই একে অপরের কার্যবিবরণীতে সই করতে সম্মত হয়নি। বৃহস্পতিবার ভোরে জুনিয়র ডাক্তারদের তৈরি কার্যবিবরণী বা বৈঠকের 'মিনিটস' স্বাস্থ্যসচিবকে ইমেল করা হয়। এরপরই স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দেন মুখ্যসচিব। সেখানে, হাসপাতালে অন ডিউটি রুম, শৌচালয়, সিসিটিভি, পানীয় জলের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়। এর পাশাপাশি, চিঠিতে বলা হয়, অবসরপ্রাপ্ত IPS ও রাজ্যের প্রাক্তন DG সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সিকিওরিটি অডিটের জন্য নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। অভিযোগ সমাধানের জন্য অভ্যন্তরীণ কমিটি-সহ সব কমিটিকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে। স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষী-সহ মহিলা পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী মোতয়েন করতে হবে। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে প্যানিক কল বাটন অ্যালার্ম সিস্টেম চালু করতে হবে।

আগামীদিনে এই আন্দোলন কোন পথে এগোয়, সেদিকেই সবার নজর।