কলকাতা: স্বাধীনতার প্রাক রাতে আর জি করে নির্যাতিতার মৃত্যুর বিচার চেয়ে রাত দখল করেছিলেন মহিলারা। সময় অতিক্রান্ত হলেও বিচারের বাণী শোনার দাবি জানিয়ে বুধবারও রাত জাগল তিলোত্তমা। মেয়ের নৃশংস মৃত্যুর বিচার চেয়ে রাত জাগলেন নির্যাতিতার বাবা-মা-ও। যে আর জি করে মেয়ের নিথর দেহ আনতে গিয়ে 'চরম হেনস্থার' শিকার হয়েছিলেন, সেই আর জি কর-এই আন্দোলনকারী চিকিৎসকের পাশে দাঁড়িয়ে 'রাত দখলে' সামিল হলেন তাঁরা। 


সাংবাদিক সম্মেলনে তুললেন একের পর এক প্রশ্ন। পুলিশ-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পর পর বিস্ফোরক প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিলেন। মৃত্যু থেকে তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগের পাশাপাশি শ্মশানের টাকায় গোপনীয়তাও অভিযোগ তুলেছেন নির্যাতিতার বাবা। পুলিশের বিরুদ্ধে মেয়ের দেহ হাইজ্যাকের অভিযোগ পরিবারের। 'কেন মেয়ের দেহ সৎকারে এত তাড়াহুড়ো করেছিল পুলিশ? হাসপাতালে ডেকে সাদা কাগজে সই করানোর চেষ্টা করেছিল পুলিশ, আমরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম, অভিযোগ পরিবারের।'


পরিবারের তরফে এও বলা হয়, 'আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে মৃতদেহ নিয়ে চলে যায় পুলিশ। দেহ দেখতে বাধা, বারবার প্রিন্সিপালের ঘরে যেতে বলে পুলিশ। ঘরে ঢুকে কেন টাকা দিতে চেয়েছিল পুলিশ? প্রশ্ন পরিবারের। ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। পুলিশ-প্রশাসনের এত অতিসক্রিয়তা, এত মিথ্যাচার কেন? মেডিক্যাল টেস্টের আগেই কীভাবে আত্মহত্যার তত্ত্ব?'


দেহ সৎকার নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, 'একটা স্বপ্নকে তিলে তিলে বড় করেছিলাম। এক রাতের মধ্যে আমাদের জীবনটা ওলোটপালট করে দিয়েছে। পুলিশ ১০টা ১০ মিনিটে আমার মেয়ের এই পরিণতির খবর পায়। কিন্তু তারপরও আমার মেয়ের কোনও শারীরিক পরীক্ষা করেনি। আমাদের উপর অত্যাধিক চাপ তৈরি করা হয়েছিল। শ্মশানের খরচ হঠাৎ ফ্রি করে দিল? কারা করল? আমরা আজ অবধি জানতে পারলাম না সেটা। কেন করা হল? মেয়ের হয়তো শেষ সময়েও মনে হয়েছে আমার বাপি এই ক'টা টাকা খরচা করতে পারল না? কী মর্মান্তিক ছিল সেই দিনটা আমার কাছে। এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে আমায়?'


নির্যাতিতার পরিবারের পাশাপাশি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বুধবার রাতে পথে নেমেছিল কলকাতা থেকে জেলা। 'কবে হবে বিচার', 'কবে দোষীরা সকলে শাস্তি পাবে'? 'আর কবে'? রাত দখলের রাতে উঠে আসে পর পর প্রশ্ন, স্লোগান, সঙ্গীত। বিচারের দাবিতে 'অন্ধকার এক রাত্রি দেখে কলকাতা থেকে জেলা। অন্ধকার সেই মুহূর্তে জ্বলে ওঠে লক্ষ লক্ষ মোমবাতি। সেই আলোতেই তিলোত্তমার বিচার চেয়ে গর্জে ওঠে তিলোত্তমা।  


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে