সন্দীপ সরকার, কলকাতা : আর জি কর কাণ্ডে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবের রিপোর্ট একসঙ্গে অনেকগুলো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সকলের সামনে। প্রথমত- ক্রাইম অফ সিন আসলে কোথায়? অন্য কোথাও নির্যাতিতাকে খুন করে তারপর কি দেহ রাখা হয়েছিল সেমিনার হলে? দ্বিতীয়ত- সেমিনার হলেই ঘটেছে গোটা ঘটনা, তারপর লোপাট করা হয়েছে তথ্যপ্রমাণ? তৃতীয়ত- সঞ্জয় রায় ছাড়া আর কেউ কি এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছে? সত্য কী তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। চারমাস পার হতে চললেও বিচার পাননি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নির্যাতিতা চিকিৎসক এবং তার পরিবার। এর মধ্যেই ক্রাইম সিন নিয়ে বাঁধছে নতুন রহস্যের দানা।
সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবের রিপোর্ট প্রসঙ্গে কী বলছেন চিকিৎসক কৌশিক চাকি
ডাক্তারবাবুর কথায়, পরিপাটি করে সুন্দর করে পাতা চাদর। তার উপর পড়ে রয়েছে নিথর একটি দেহ। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন। যাকে ধরা হয়েছে তার উপর আঘাত আনা হয়েছে বলে তার গায়েও আঘাতের চিহ্ন। একটি সুস্থ-সবল মেয়ে। তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা হচ্ছে। গলা টিপে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে। সে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। অথচ জলের বোতল, টিফিন বাক্স, পুরো সেমিনার রুমে কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। একটা নৃশংস অপরাধ হচ্ছে। অথচ ক্রাইম সিনে কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। আমরা রাতে যে বিছানায় শুই সেটাও সকালে দেখি চাদর কুঁচকে গেছে। বালিশ সরে। সেখানে এত বড় একটা নৃশংস ঘটনা, ধর্ষণ এবং খুন হল অথচ কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেল। সত্যিই কি এটাই 'প্লেস অফ ক্রাইম' নাকি এই ঘটনার জায়গা অন্য কোথাও, এখানে শুধুই পাওয়া গিয়েছে দেহ।
সিএফএসএল- এর রিপোর্টে ৫ জন সিনিয়র সায়েন্টিস্টের (ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ) সাক্ষর রয়েছে। টিমের হেড ডক্টর বি কে মহাপাত্র। এছাড়াও রয়েছে, একজন বায়োলজি এক্সপার্ট, একজন ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট, দু'জন ফটো এক্সপার্টের সাক্ষর। ১২ পাতার রিপোর্টের শেষ পাতায় স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে ম্যাট্রেসে নির্যাতিতার দেহ ছিল সেখানে কোনও রকম ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। ম্যাট্রেসের পাশাপাশি সেমিনার হলের ভিতরের অংশেও নেই কোনও ধস্তাধস্তি অর্থাৎ 'স্ট্রাগল'- এর চিহ্ন।
কী বলছেন সিনিয়র ডাক্তার মানস গুমটা
ডক্টর মানস গুমটাও বলছেন, একটা এত বড় নারকীয় ঘটনার ক্রাইম সিন এভাবে সাজানো গোছানো ড্রয়িং রুমের মতো হতে পারে না। এই প্রশ্ন আমরা আগেও তুলেছি। এখনও তুলছি। এই হত্যা যদি অন্য কোথাও হয়ে থাকে তাহলে সিবিআই কি তদন্তে কিছু 'মিস' করে যাচ্ছে নাকি ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাচ্ছে? মানুষ কিন্তু উত্তর চাইছেন। ৯০ দিন পেরোনোর পরও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে পারেনি সিবিআই। তার জেরে তথ্যপ্রমাণ লোপাটে অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গেল। আমাদের মনে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, রাজ্য প্রশাসন, সিবিআই- এর কোথাও না কোথাও গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। তথ্যগুলোকে তারা এতদিন সাধারণ মানুষের সামনে আনেনি।
আরও পড়ুন- আর জি কর কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য, ক্রাইম সিন নয় সেমিনার রুম, অন্য কোথাও খুন অভয়া ?