সোমনাথ মিত্র, হুগলি : বরাবর স্কুলে প্রথম। মাধ্যমিকে রাজ্যে অষ্টম। উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ। শুধু পড়াশোনা নয়, আঁকা, আবৃত্তিতেও প্রথম পুরস্কার ছিল বাঁধা। ঘরের আলমারিতে থরে থরে সাজানো বই। তার পাশেই রয়েছে একাধিক সাফল্যের স্বীকৃতি। ‘দাদাগিরি’র মঞ্চে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরস্কারও নিয়েছিলেন। হুগলির সেই মেধাবী ছেলে দেবাশিস হালদার এখন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ। ছেলের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে চোখে জল মায়েরও। কামালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন দেবাশিস। ২০০৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে অষ্টম হন। ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে দখল করেন একাদশ স্থান। এর পর ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় (নিট) সাফল্য। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেন। বর্তমানে সেখানেই অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগে কর্মরত তিনি। হুগলির বলাগড়ের খামারগাছির সিজা বাজারের কাছে মুক্তকেশীতলার বাসিন্দা দেবাশিস। পরে অসম লিঙ্ক রোডের পাশে পরিবার-সহ উঠে আসেন তাঁরা। বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে থাকেন মা অণিমা, বাবা ক্ষীতিশ এবং পিসি মীরা হালদার।
ছোট থেকেই মেধাবী। স্কুলে বরাবরই প্রথম। একই রকম সফল আঁকা ও আবৃত্তিতে। একের পর এক প্রতিযোগিতার সেরার শিরোপা। অভিনয়েও ভীষণ তুখোড়। ঘরের আলমারিতে থরে থরে সাজানো বই । তার পাশেই রয়েছে একাধিক সাফল্যের স্বীকৃতি। জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'দাদাগিরি' র মঞ্চে গিয়েও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছিলেন । সেই ছেলেই আজ হয়ে উঠেছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিবাদের অন্যতম মুখ।
আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। হাজার হাজার প্রতিবাদী কণ্ঠদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কিঞ্জল নন্দ, অনিকেত মাহাতো, রুমেলিকা কুমার, দেবাশিসরা। হুগলির বলাগড়ের খামারগাছির দেবাশিস হালদার। তাঁর এই আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে পরিবারেরও। বিয়ে করেছেন ৬ মাস আগে। স্ত্রীও জুনিয়র চিকিৎসক, সহযোদ্ধা।
বাড়িতে আছেন, মা অনিমা, বাবা ক্ষিতীশ ও পিসি মীরা হালদার। ছোটবেলায় তাঁকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া থেকে পড়াশোনার সব দায়িত্ব সামলাতেন পিসি। এলাকায় বাবার ছোট্ট একটি দোকান ছিল। পরে পূর্ত দপ্তরে গ্রুপ ডি পদে চাকরি পান। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ছোট্ট দেবাশিস। সেখান থেকেই ২০০৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে অষ্টম হন তিনি। ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে একাদশ তিনি। এরপর নিটে অভূতপূর্ব সাফল্য। কলকাতার মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেন। বর্তমানে কলকাতা মেডিকেল কলেজে অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগে কর্মরত তিনি।
চিকিৎসক দেবাশিস রাজনীতিতে কোনদিনও যুক্ত ছিলেন না এমনটাই দাবি পরিবারের। আরজি করের ঘটনার পর যে ভাবে আন্দোলন করছেন ছেলে , তাতে গর্বিত তার বাবা-মা। রোদে জলে রাস্তায় থেকে প্রায় দেড় মাস অধিকারের লড়াই লড়ছেন চিকিৎসকরা। আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে মা অনিমা বলেন, 'ছেলে ন্যায়ের জন্য আন্দোলন করছে এটা আমাদের খুব ভাল লাগছে। ছোট থেকে প্রতিবাদী না হলেও কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিত না। সব সময় সত্যি কথা বলত। বেশিরভাগ সময়টা পড়াশোনার মধ্যে দিয়েই কাটতো।এখন ছেলের সঙ্গে খুব একটা বেশি কথা হয় না। তবে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় লাগে। আবার এটা ভেবে সাহস জাগে সিনিয়র ডাক্তাররা তাদের পাশে রয়েছেন। ছেলে সফল হোক, এটা চাই । পাশাপাশি তরুণী চিকিৎসককে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, একজন মা হিসাবে তার ন্যায্য বিচার চাই।'
পিসি মীরা হালদার বলেন, 'লেখাপড়ায় বরবার ভাল। মেধাবী ছাত্র । একবার বললেই খুব সহজেই বুঝে নিত সমস্ত পড়া। নবম - দশম শ্রেণি থেকে নিজেই সব করে ফেলত। তার এই আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি। কারণ সে যা করছে সত্যের জন্য করছে। আমাদের পরিবারটা সত্যে ও ন্যায়ের উপরেই প্রতিষ্ঠিত।'
বাবা ক্ষিতীশ হালদার বলেন, ' আন্দোলন এত বড় হবে তা ভাবতে পারিনি। আজ গোটা বিশ্বে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা যেভাবে এই আন্দোলনটা করছে তাতে আমি গর্বিত। ধর্না মঞ্চে আমরাও গিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এটা দেখে আমার আরো বেশি ভাল লেগেছে। এই আন্দোলনে কোন রাজনৈতিক রঙ নেই। মেরুদণ্ড সোজা রেখে আন্দোলন করছে। আর তাঁদের এই আন্দোলনকে আমি কুর্নিশ জানাই। '
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।