কলকাতা: এবার আর জি কর মেডিক্যালের চিকিৎসকদের গণ ইস্তফা। ১০ দফা দাবিতে ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশনের আড়াই দিন পার। এখনও সাড়া দেয়নি সরকার, তারই প্রতিবাদে গণ ইস্তফার সিদ্ধান্ত সিনিয়র চিকিৎসকদের। ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক গণ ইস্তফা দিচ্ছেন বলে খবর। সকালের বৈঠকেই গণ ইস্তফার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানা গিয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি দিয়ে গণ ইস্তফার কথা জানানোর পাশাপাশি, সরকারকে একদিন সময় দিয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। (RG Kar Protests)


ধর্মতলায় এখনও আমরণ অনশন চলছে জুনিয়র চিকিৎসকদের। ১০ দফা দাবি নিয়ে আড়াই দিন ধরে অনশনে রয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, আর জি কর হাসপাতালে প্রতীকী অনশনেও বসেছেন বেশ কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসক। আর সেই আবহেই গণ ইস্তফার সিদ্ধান্ত সিনিয়র চিকিৎসকদের। ইস্তফা দিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র চিকিৎসকরা। আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসকরা অন্য হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছেন। (Kolkata News)


এখনও পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি চিকিৎসক ইস্তফাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বলে খবর। সিনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছে, পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি যা, তা রোগী পরিষেবার উপযুক্ত নয়। সেই কারণেই আর চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারছেন না তাঁরা। অনশনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে বলেও দাবি জানিয়েছেন।



এদিন সকালে সিনিয়র চিকিৎসকরা বৈঠকে বসেন। এর পরই একে একে সকলে ইস্তফা দিতে শুরু করেন। এর আগে, জুনিয়র চিকিৎসকরা কর্মবিরতির পথে হেঁটেছিলেন। পরবর্তীতে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ধর্মতলার মোড়ে আমরণ অনশনের পথ বেছে নেন। কিন্তু আড়াই দিন পার হতে চললেও, এখনও সরকার আলোচনার জন্য সদর্থক ভূমিকা নেয়নি বলে অভিযোগ। তাই এবার গণ ইস্তফার পথে হাঁটলেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। 


এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে সিনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে একজন বলেন,"এখন জুনিয়র চিকিৎসকদের যে অবস্থা, যে অবস্থায় অনশন চালিয়ে যেতে হচ্ছে, তা কিন্তু সকলের কথা ভেবেই নেওয়া। সেই নিয়ে সরকারের তরফে সদিচ্ছা দেখছি না। ওদের রক্তচাপ কমে যাচ্ছে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমছে। সরকারের তরফে কিছু না হওয়ায়, আমরা সিনিয়ররা ওঁদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।" এর পরও সরকারের তরফে চেষ্টা না হলে, ব্যক্তিগত ভাবে ইস্তফা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ।


আর এক চিকিৎসক বলেন, "গত দু'মাস ধরে আন্দোলন চলছে। গত তিন দিন ধরে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা অনশনরত, তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। আমরাও আর ঠিক থাকতে না পেরে সমবেত ভাবে গণ ইস্তফা দিলাম। তার মানে কাল থেকেই কাজ বন্ধ করে দিলাম, তা নয়। এভাবে হাসপাতাল খালি করে যাব না। গণ ইস্তফার অর্থ হল, প্রশাসনকে বার্তা দেওয়া, যাতে আলাপ-আলোচনায় বসে প্রশাসন। আর জি করেও অনশনে চলছে, উত্তরবঙ্গেও চলছে।"


জুনিয়র চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ডাক দিলে, এই সিনিয়র চিকিৎসকরাই হাসপাতালে রোগীদের পরিষেবা দিচ্ছিলেন। তাঁদের তত্ত্বাবধানেই কাজ করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাই সিনিয়র চিকিৎসকরা ইস্তফা দিলে, হাসপাতালের রোগী পরিষেবা ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পঞ্চমীর দিন জোড়া কর্মসূচিও রয়েছে চিকিৎসকদের। মহামিছিলের পাশাপাশি, সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন কর্মসূচিও চলছে। সেই আবহেই ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসকরা গণ ইস্তফা দেওয়ার পথে হাঁটলেন।