কলকাতা: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকায় ফের তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন আর জি করে ধর্ষণ ও খুনের শিকার তরুণী চিকিৎসকের মা-বাবা।  জানিয়েছেন, পুলিশ-কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা, তারও তদন্তেই খুশি নন তাঁরা। সিবিআই-এর তদন্তে একাধিক জায়গায় ফাঁক রয়েছে বলে যেমন অভিযোগ তরলেন, তেমনই সব জেনেও সিবিআই তথ্য গোপন করছে বলেও অভিযোগ তুললেন। প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আচরণ নিয়েও। (RG Kar Victim's Family)

গত বছর অগাস্ট থেকে ২০২৫ সালের অগাস্ট, আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার মৃত্যুবার্ষিকী এসে গেল। আগামী ৯ অগাস্ট নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবার। ১৪ অগাস্ট ফের 'রাত দখলে' আহ্বান জানিয়েছেন সকলকে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে পাশে নিয়ে গতকালই এই বার্তা দেন নির্যাতিতার পরিবার। আর রবিবার সকালে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। (RG Kar Case)

আর জি কর কাণ্ডে প্রথমে কলকাতা পুলিশই তদন্ত করছিল। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতারও করে তারা। কিন্তু পুলিশ আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে অভিযোগ তোলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। কিন্তু পরবর্তীতে সিবিআই তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এদিনও ফের তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। 

নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছেন, সিবিআই-এর তদন্তে একেবারেই খুশি নন তাঁরা। নির্যাতিতার মা বলেন, "ময়নাতদন্তের রিপোর্টে রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে মেয়ে মারা গিয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে ওর সঙ্গে কে বা কারা ছিল? তাঁদের কেন তদন্তের আওতায় আনা হল না? কেন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল না? তাই বলছি, তদন্ত শুরু হয়নি এখনও।"

নির্যাতিতার বাবা সরাসরি সিবিআইকে নিশানা করেন। বলেন, "সিবিআইয়ের ভূমিকা নক্ক্যারজনক বললেও ভুল হয়। খুব খারাপ ভূমিকা। গতকাল বিশ্বজিৎ সরকারের ভাইয়ের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে দেখবেন বড় বড় নাম দিলেও, হেফাজতে নেওয়ার কথা নেই। বেকার চার্জশিট দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা। আমরা সিবআই-এর কাছে বিচার চেয়েছিলাম। সিবিআই সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে দিয়েছে এবং দেখা হলেই গর্বের সঙ্গে আমাদের বলে যে, "আমরা একজনকে দোষী সাব্যস্ত করিয়েছি। আপনারা বিচার চেয়েছিলেন, বিচার দিয়ে দিয়েছি"।

নির্যাতিতা আসল সত্য জেনেও প্রকাশ করছে না বলে অভিযোগ তোলেন নির্যাতিতার মা। তিনি বলেন, "সিবিআই সব জানে। অজ্ঞাত কারণে কিছু সামনে আনছে না তারা। আমরা সেই কারণ বুঝতে পারছি না।" নির্যাতিতার বাবার বক্তব্য, "সিবিআই ভারতের প্রথম সারির সংস্থা। আমরা যে কথাই বলি, এড়িয়ে যায়, মুছে দেয়। অর্থাৎ তারা সব জানে, আমরা কিছু জানি না।"

আর জি করের নির্যাতিতার মা বলেন, "পুলিশ তথ্য প্রমাণ পায়নি বলছে। সঞ্জয়কে একমাত্র দোষী সাব্যস্ত করেছে ওরা। সেখানে বিচার পাওয়া যাবে না। স্নিফার ডগ আনা হয়েছিল, কিন্তু তদন্ত করার জন্য নয়, প্রমাণ মোছার জন্য। আমাদের যেতে দেওয়া হয়বনি। সাড়ে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ধুয়ে মুছে সাফ করা হয়েছিল। তাই পর দিন, ১১ তারিখ সেমিনার হলের পাশের দেওয়ালটা ভাঙা হয়। চেস্ট মেডিসিনের সবাই সই করেছিল তাতে। খুনিরা চেস্ট মেডিসিনে রয়েছে এখনও।"

আর জি করের নির্যাতিতার মা-বাবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দফতরেও চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তবে আন্দোলন এবং আদালতের উপরই ভরসা রাখছেন বলে জানিয়েছেন।