সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা : আরজি কর মেডিক্য়ালে তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসির বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করল নিহত নির্যাতিতার পরিবার। তাঁদের দাবি, তদন্তকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি। থানায় তাঁদের অনেক পুলিশ ঘিরে রেখেছিল বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।


আর জি কর মেডিক্য়ালে তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যেই প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। মঙ্গলবার, তাঁদের বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্যকর দাবি করল নির্যাতিতার পরিবার। নিহত নির্যাতিতার মা বলেন, নিহত নির্যাতিতার মা বলেন, "শুধু দু'জন কেন, আরও অনেকেই জড়িত। আমরা যখন আবার দেহ সংরক্ষণ করব বলে গিয়েছিলাম, টালা থানার সামনে গিয়ে অনেক পুলিশ আমাদের ঘিরে রেখেছিল। ওদেরও তদন্তের আওতায় এনে জেরা করা উচিত। "


এ প্রসঙ্গে নিহত নির্যাতিতার বাবা বলেন, "প্রথম থেকেই তো আমরা দেখে আসছি, তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে। নইলে ওই পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা বাইরে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে কেন ? ভেতরে এত লোক ঘোরাঘুরি করছে। আমরা তো বুঝতে পারছিলাম। আমার স্ত্রী গিয়ে পুলিশের পায়ে পড়ে...এত লোককে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন, আমাদের একটু ঢুকতে দিন। কিন্তু, আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার মানেটা কী ? তথ্যপ্রমাণ লোপাট তো হয়েছেই। তারজন্য পুলিশ এবং প্রশাসন দুজনেই দায়ী। কলেজ কর্তৃপক্ষও দায়ী।"

আর জি কর মেডিক্য়ালে ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে CBI-এর স্টেটাস রিপোর্ট দেখে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
এখানেই শেষ নয়, CBI-এর রিপোর্ট দেখে তিনি আরও বলেন, মনে হচ্ছে CBI গোটা বিষয়টা সামনে আনার দিকেই এগোচ্ছে। স্টেটাস রিপোর্টে কী আছে, তা প্রকাশ্যে আনলে তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। OC গ্রেফতার হয়েছেন। তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেরিয়ে আসবে। CBI প্রমাণ নষ্ট এবং কার কী খামতি ছিল, তা খতিয়ে দেখছে। যে সব দিকে নজর দিতে বলা হয়েছিল, CBI সবদিক খতিয়ে দেখছে।


এ প্রসঙ্গে নিহতের পরিবারকে জানতে চাওয়া হয়, সুপ্রিম কোর্টে আপনারা একটা চিঠি দিয়েছিলেন। তাতে পরিষ্কার ভাষায় একটা জায়গায় লেখা রয়েছে, আপনারা দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য ওসি টালাকে বলেছিলেন ? কিন্তু, তিনি মানতে চাননি। এপ্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "হ্যাঁ, এক ঘণ্টা ওখানে বসেছিলাম যদি কোনও সুরাহা করতে পারি। ওখানে যারা পুলিশ ছিল তাদের বলেছিলাম। আমাদের তো গাড়ি থেকে নামতেই দেওয়া হচ্ছিল না।"


অন্যদিকে মা বলেন, "আমরা তো প্রথম থেকেই বলছি বিচলিত হওয়ার মতোই ঘটনা। কারণ, আমার মেয়ে ওখানে অনডিউটি অবস্থায় হাসপাতালের মতো সুরক্ষিত জায়গায় যেভাবে তার নৃশংস হত্যা হয়েছে তার উপরেও যেভাবে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ব্যবস্থা হয়েছে প্রশাসনের থেকে সেগুলো তো জঘন্য অপরাধ। এগুলো তো বিচলিত হওয়ার মতোই। গা শিউরে ওঠার মতো ব্যাপার। " এর পাশাপাশি তাঁর আবেদন, "সারা রাজ্যবাসী, দেশবাসী, বিশ্বাসী সবাইকে বলছি, সবাই আমার মেয়ের জন্য যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, যতদিন না বিচার পাই ততদিন যেন আমার পাশে এভাবেই দাঁড়ান। এ এক কন্যাহার মায়ের আর্তি।"


অন্যদিকে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা যাঁরা নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন সমানে, তাঁদের উদ্দেশে নিহত নির্যাতিতার বাবা বলেন, "নিজেদের সম্পূর্ণ সুরক্ষাটা যেন নিজেরাই বুঝে নেন। কারণ, এখন যা পরিস্থিতি চলছে তাতে নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই বুঝে নিতে হবে। সুরক্ষা সবার আগে দরকার।"

সবমিলিয়ে, ঘটনার ৪০ দিন পরও প্রশ্ন অনেক। কিন্তু, উত্তর অধরাই।