কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। কিন্তু তদন্তের কিনারা হওয়া তো দূর, বরং যত সময় যাচ্ছে, আরও ঘোরাল হচ্ছে রহস্য। সেই আবহে আর জি কর হাসপাতালের তরফে নির্যাতিতার পরিবারের কাছে যে ফোন যায়, সেই অডিও ক্লিপ ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তিন-তিনটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে, যাতে বার বার বয়ান বদল করতে শোনা গিয়েছে এক মহিলাকে। ওই অডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। তবে অডিও ক্লিপটিকে ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে। (RG Kar Viral Audio Clip)
মেয়ে অসুস্থ বলে প্রথমে ফোন করা হয় এবং পরে আত্মহত্যার তত্ত্ব দেওয়া হয় বলে প্রথম থেকেই দাবি করছিলেন নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন। ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটিতেও তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। প্রথম বার ফোন করে বলা হয়, তরুণী চিকিৎসক অসুস্থ। দ্বিতীয় বার ফোন করে বলা হয়, ইমার্জেন্সিতে আনা হয়েছে। জলদি এসে পৌঁছন পরিবার। তৃতীয় বার ফোন করে বলা হয়, তরুণী আত্মহত্যা করেছেন হয়ত। (RG Kar Case)
হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার পরিচয় দিয়ে এক মহিলা নির্যাতিতার পরিবারকে ফোন করেন। অডিও ক্লিপেও মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে। কিন্তু বার বার তিনি যেভাবে বয়ান পাল্টেছেন, যে সুরে কথা বলেছেন নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে, সেই নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি প্রথন থেকেই তথ্য লুকনোর চেষ্টা করছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ? যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি?
কারণ অডিও ক্লিপে শোনা গিয়েছে, ওই মহিলা পরিবারকে জানাচ্ছেন, তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দ্বিতীয় বার ফোন করে বলা হয়, তরুণী চিকিৎসককে ইমার্জেন্সি বিভাগে আনা হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসে পৌঁছতে হবে পরিবারের লোকজন। তৃতীয় ফোনে আবার সম্পূর্ণ বদলে যায় বয়ান। বলা হয়, তরুণী চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন হয়ত। হাসপাতালের দেহ উদ্ধারের সময় চিকিৎসক, নার্স, সকলেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ, ফরেন্সিক দলও এসে পৌঁছয়। নির্যাতিতার সঙ্গে কী হয়েছে, তা তাঁদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে নির্যাতিতার পরিবারকে কেন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া হল, উঠছে প্রশ্ন।
যে মহিলা ফোন করেন পরিবারকে, তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বলে পরিচয় দেন। জানান, চিকিৎসক, পুলিশ, সকলেই রয়েছেন ঘটনাস্থলে। সকলের সামনে থেকেই ফোন করছেন তিনি। এখানে প্রশ্ন হল, ফোনে পরিবারকে যে প্রকৃত তথ্য দেওয়া হচ্ছিল না, সামনে থেকে ফোন করা হলে তা তো উপস্থিত সকলেই বুঝতে পারছিলেন? তাহলে কেউ আটকালেন না কেন? তাহলে কি বিভ্রান্তিমূলক তথ্যই দিতে বলা হয়েছিল ওই মহিলাকে?
যেভাবে ওই মহিলা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন, তা নিয়েও আপত্তি উঠছে। যে কোনও ক্ষেত্রে পরিবারকে দুঃসংবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ব্যবহারে থাকে সংযম, নম্র ভাব। মুখের উপর দুম করে মৃত্যুর খবর দিয়ে দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সকলেই তরুণী চিকিৎসকের সহকর্মী। তাঁদের পরিবারের প্রতি সমব্যথি হওয়ার কথা। ঘটনার স্পর্শকাতরতা অনুধাবন করে, সেই মতো আচরণ করা উচিত ছিল তাঁদের। তার পরও কীভাবে কথা বলার সময় ওই মহিলার কণ্ঠে সহমর্মিতা ফুটে উঠল না, উঠছে প্রশ্ন। ওই মহিলা একাই এই ঘটনা ঘটান, না কি , নেপথ্যে আরও কেউ বা কারা রয়েছেন, এড়ানো যাচ্ছে না সেই প্রশ্নও। প্রথম থেকেই আসলে বিষয়টিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছিল, বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছিল বলে উঠছে অভিযোগ।
এক্ষেত্রে চরম অসংবেনশীলতার পরিচয় মিলেছে বলে মনে করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সব্যসাচী মিত্রও। তিনি বলেন, "ইংরেজিতে এমন দুঃসংবাদ দেওয়াকে 'ব্রেকিং ব্যাড নিউজ' বলা হয়। এক্ষেত্রে কোনও রকম ট্রেনিংই তো শুনতে পেলাম না! যে কণ্ঠস্বর বলছেন, তিনি খুব তাড়াহুড়ো করছেন। ওঁকে উৎকণ্ঠিতও, গলার স্বর থেকে বোঝা যাচ্ছে। ফোনটা যে তড়িঘড়ি করা, অতি সামান্য তথ্য দিয়ে দ্রুত কথা শেষ করতে চাইছেন, বোঝা যাচ্ছে সেটাও। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। সহানুভূতির সঙ্গে কথা বলতে হয়। সাধারণত ফোনে দুঃসংবাদ দেওয়া উচিত নয়। এই যে বলা, আপনার সুইসাইড করেছে হয়ত, এটা যাঁকে বলা হচ্ছে, তিনি আরও উদভ্রান্ত হয়ে পড়বেন। সহানুভূতি বলে যা আছে, তা এই কথোপকথনে কোথাও নেই। দুঃসংবাদ দেওয়ার প্রোটোকল আছে, ট্রেনিং হয়, ভিতর থেকেও আসতে হয়। এখানে কোনও কিছুই পেলাম না।"