কলকাতা : ৯ অগাস্ট। কলকাতার বুকে নারকীয় ঘটনা। আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন। ভয়াবহ এই ঘটনা বদলে দিয়েছিল মহানগরের ছবিটা। মানুষকে ভাবিয়ে ছিল,' মানুষ বড় একলা তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও, এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালবেসে দাঁড়াও, মানুষ বড় কাঁদছে তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও' ।
এ আন্দোলন শুধু চিকিৎসকদের নয়। সাধারণের। কোনও দলের নয়। দল-মতের ঊর্ধ্বে। অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই । এই চেতনা থেকেই একটা 'রাত দখল' -এর ডাক। ১৪ অগাস্ট , ২০২৪। মধ্যরাতে বিচার চেয়ে লক্ষ লক্ষ কণ্ঠের নিনাদ, লক্ষ-লক্ষ প্রতিবাদের মোমবাতি জ্বলে ওঠা, এ তিলোত্তমা স্মরণাতীতকালে দেখেনি কখনও। সেই আন্দোলনের কাণ্ডারী তিনি। তিনিই প্রথম দিয়েছিলেন ডাক। তারপরের ঘটনা ইতিহাস। দলহীন, ঝান্ডাবিহীন নৈশ অভিযানের মুখ রিমঝিম সিনহা। তিনিই এবার, এবিপি আনন্দ-এর সেরার সেরা বাঙালি।
রিমঝিম প্রশ্ন করেছেন, রাত কি কারও একার সম্পত্তি? তিনি মনে করেন, সব লড়াই জেতার জন্য নয়। কিন্তু লড়াইতে আছি, সেই বার্তাটাও দিতে হয়। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী রিমঝিম সিনহা। সেরার সেরা বাঙালি সম্মান হাতে নিয়ে রিমঝিম বললেন, এটা শুধু আমার সম্মান নয়, আমার মনে হয়। বাংলার প্রত্যেক সাধারণ ঘরের নারীকে সেরার সেরা বলা হয়েছে, যাঁরা প্রতিনিয়ত তাঁদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে লড়াই করছেন, অন্যদের সাহস জোগাচ্ছেন।
এবিপি লাইভকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে রিমঝিম বললেন, এবারের ১৪ অগাস্টের পর যাঁরা রাস্তায় নেমেছেন, তাঁরা বলেছেন, তাঁরা পার্টি-সোশ্যাইটিকে চাইছেন না, তাঁরা মনে করছেন না কোনও পার্টিই তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পেরেছে। আমরা বহু পার্টিকে দেখছি, যারা হয়ত আন্দোলনে অংশ নিয়েছে বা সরকারে গেছে, কিন্তু তারা নিজেরা কখনওই পার্লামেন্টে বা তাদের সভায় নারীর নিরাপত্তা বা স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেননি। তারা রিজার্ভেশন নিয়ে কথা বলেননি। তাদের দলের হয়ে যাঁরা জমিতেছেন, তাঁরা কখনওই নারী নিরাপত্তা বা স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠে আসতে পারেননি। যদি আমরা তৃণমূল কংগ্রেসকে কংগ্রেসের শুরু থেকে বা সিপিআইএম-কে সিপিআই থেকে দেখি, তাহলে সেঞ্চুরি পেরিয়ে গেছে, কিন্তু নারী নিরাপত্তা নিয়ে কথাটা খুব একটা শুনিনি। এই আন্দোলন থেকে এটা পরিষ্কার মানুষ আসলে বিকল্প চিন্তাধারার কথা ভাবছেন।
রিমঝিম বলছেন, আমাদের আসলে বিকল্প চিন্তাধারা তৈরি করা দরকার। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে প্র্যাকটিস তৈরি করা দরকার। আমরা যদি নারীকে অবমাননার চোখে দেখি, পণ্যবস্তুর চোখে দেখি, তাহলে এই ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলবে। এটা শুধুমাত্র একটি ফাঁসি বা একটি কেসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে সম্ভব নয়, তাই বিকল্প কিছু তৈরি করা দরকার।
কেষ্টপুরের মেয়ে রিমঝিম সিন্হা নিজেও কল্পনা করতে পারেননি, তাঁর এক ডাকে এক হতে পারে লক্ষ লক্ষ মুষ্ঠিবদ্ধ হাত। সমাজের শিরায় ছড়িয়ে দিতে পারে প্রতিবাদের শিহরণ। রিমঝিমের এই আন্দোলন সার্থক হোক। রাত থেকে দিন, অষ্টপ্রহরই সর্বত্র নির্ভীক পা পড়ুন মেয়েদের। আর যেন অভয়া, তিলোত্তমা ইত্যাদি রূপক নামের আড়ালে কারও আসল পরিচয় না চাপা দিতে হয়।