সুনীত হালদার, হাওড়া: প্রাণ থাকলে সব হবে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে (Russia Ukraine War) কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন ডোমজুরের যুবক রোহন আজাদ লস্কর। কিন্তু যে জন্য ইউক্রেনে যাওয়া, সেই মেডিকেল ডিগ্রির কী হবে? কোর্স শেষ হতে বাকি ছিল আর মাত্র তিনমাস। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনমাস পরই হাতে চলে আসম মেডিকেল ডিগ্রি। কিন্তু এখন কী হবে? ভারতে কি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে? নাকি এতদিনের পরিশ্রম সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে? ইউক্রেন থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে ফিরে আসলেও এই চিন্তাই এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাঁকে।
ডাক্তারি পরীক্ষার কোর্স শেষ হতে বাকি আর মাত্র তিনমাস। তারমধ্যেই শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধে প্রাণ বাঁচানোই তখন একমাত্র লক্ষ ছিল। তাই পড়াশোনা শেষ না করেই ঘরে ফিরতে বাধ্য হল ইউক্রেনের কিভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্র রোহন আজাদ লস্কর। গতকাল গভীর রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন। ছেলে বাড়ি ফেরায় পরিবারের সদস্যরা হয়তো হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। কিন্তু একরাশ দুশ্চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বছর ছাব্বিশের রোহনকে। তিনি কি আদৌ হাতে মেডিকেল ডিগ্রি পাবেন? নাকি এখানে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে? ৬ বছর আগে ডাক্তারি পড়তে তিনি ভর্তি হন কিভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে। কোর্স যখন শেষের মুখে, তখনই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন। এখন কী হবে?
আরও পড়ুন - Howrah Weather Update: আজ হাওড়ার আবহাওয়া কেমন, কালকের পূর্বাভাস কী?
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফেরা ডাক্তারি পড়ুয়া রোহন আজাদ লস্কর জানাচ্ছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর গোটা দেশের পরিস্থিতি বদলে যায়। ঘনঘন সাইরেন এবং বোমা বর্ষণের শব্দে কিভের মাটি কেঁপে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ছাত্ররা হোস্টেলের বাংকারে কাটায় রাতের পর রাত। ইউক্রেন সেনার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে বাইরে বেরোনোর কোন উপায় ছিল না। শেষে কারফিউ উঠলে ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে আটটায় হোস্টেলের বাঙ্কার ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন তিনি ও তার বন্ধুরা। ভারতীয় দূতাবাসের কোন সাহায্য ছাড়াই ৯ ঘন্টার ট্রেন জার্নি করে লিভে পৌঁছায়। সেখানে প্রচণ্ড ঠান্ডায় এক রাত থাকার পর বাসে চেপে হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তি স্টেশন চপ-এ পৌঁছায়। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে হাঙ্গেরির সীমান্ত। এরপর ভারতীয় দূতাবাসের সাহায্যে সীমান্তে পেরিয়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে বাসে বুদাপেস্ট এয়ারপোর্টে এসে বিমান ধরে গতকাল রাতে কলকাতা এয়ারপোর্টে ফেরার পর হাওড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাড়িতে করে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফেরার পরও ডাক্তারি পড়ুয়া রোহন আজাদ লস্করের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। যেভাবে তিনি প্রাণ হাতে করে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন সেই অভিজ্ঞতা জীবনে কোনদিনই ভুলবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসায় খুশির বাবা-মা এবং আত্মীয়-স্বজন। তাঁরা চাইছেন না তাঁদের ছেলে ফের ইউক্রেনে ফিরে যাক।
তবে ঘরে ফিরেও রোহনের আক্ষেপ তাঁর মেডিকেল কোর্স সম্পূর্ণ হল না। শুধুমাত্র বাকি ফাইনাল পরীক্ষা। তাহলেই ডিগ্রী পাওয়া যেত। রোহন এবং তাঁর মত মেডিকেল পড়ুয়ারা রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করছেন যাতে দেশে কিছু ব্যবস্থা নিয়ে তাদের মেডিকেল কোর্স সম্পূর্ণ করে দেওয়া হয়। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা। দেশ ও রাজ্যের সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তা জানার অপেক্ষায়।