কলকাতা: ২ বাসের রেষারেষি, অভিযোগ সেই বাসের ধাক্কাতেই প্রাণ গিয়েছিল ক্লাস ফোরের ছাত্র আয়ূষ পাইকের। সেই ঘটনার একদিন পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুললেন মৃত শিশুর মা। অন্য়দিকে, দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনাস্থলে যানবাহান নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হল প্রচুর পুলিশ। তৈরি করা হচ্ছে নতুন স্পিড ব্রেকার। 


কী অভিযোগ? 

ফের কোল খালি হয়ে গেল এক মায়ের। অভিযোগ, বাসের রেষারেষি কেড়ে নিল সন্তানকে। তাও আবার একেবারে পুলিশের নাকের ডগায়। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তা এটাই। প্রত্য়ক্ষদর্শীদের দাবি, রোজকার মতো মঙ্গলবারও নিজের সন্তান সহ ২ শিশুকে নিয়ে স্কুটারে বাড়ি ফিরছিলেন মহিলা। সল্টলেক ২ নম্বর গেটের কাছে, ২১৫A-রুটের ২ টো বাস রেষারেষি করতে করতে স্কুটারে ধাক্কা মারে। স্কুটার থেকে ছিটকে পড়ে ক্লাস ফোরের ছাত্র। মাথার পিছনে মারাত্মক আঘাত লাগে। নিহত স্কুলছাত্রের মা নুরজাহান পাইকের অভিযোগ, "আমি কোনও পুলিশই দেখিনি। বি সি রায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। একটুও আমার বাচ্চাকে দেখল না। বিধাননগরের এক অফিসারকে ফোন করলাম। বলল আমার এরিয়া নয়। আমার বাচ্চাটা মরে গেল।আমার বাচ্চাটা পড়ে যায় ধাক্কা লাগার পর ঘটনার পর পুলিশ আমি দেখতে পাইনি। ১০ মিনিট রাস্তার পড়েছিল আমার বাচ্চাটা। স্থানীয়রা আসে। অটো করে নিয়ে যায়।'' উদ্ধারকারী অটো চালক খোকন মাইতি বলেন, "আমি দৌড়ে যাই। পড়ে রয়েছে। অটোতে তুলে দিই। দুর্ঘটনার সময় বিধাননগর ট্রাফিক পুলিশের কিয়স্ক রয়েছে সেখানে গিয়ে পুলিশকে বলি এই সব ঘটেছে। বলছে যাচ্চ। পুলিশরা নিজেরা মোবাইল নিয়ে ব্য়স্ত। বলল দেখছি। পুলিশ এত কাছে ছিল।''

অভিযোগ, স্থানীয়রাই শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে যান একটি হাসপাতালে। সেখান থেকে রেফার করা হয় বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। অভিযোগ, চিকিৎসা হয়নি শিশুর। এমনকী, এক্ষেত্রেও পুলিশকে জানিয়ে কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ। নিহত স্কুলছাত্রের মায়ের অভিযোগ, "বি সি রায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুর্বব্য়ববার করা হয়। তাড়িয়ে দেয়। কোনও ট্রিটমেন্ট করেনি। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ওর। বিধাননগর পুলিশকে ফোন করেছিলাম ওরা বলল এটা আমার এরিয়া নয়। বেলেঘাটার ডিভাইন নার্সিং হোমে সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করে।'' বিসি রায় শিশু হাসপাতালের অধ্য়ক্ষের দাবি, নিউরো সার্জারির পরিকাঠোমা আছে, এমন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দরকার ছিল শিশুকে। তাই, অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। পরিবারের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে বিধাননগর উত্তর থানা। সাফাই খাড়া করেছেন, দুর্ঘটনার সময় কিয়স্কের কাছে কর্তব্যরত থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার কাঞ্চন কয়াল। তিনি বলেন, "আমি কিয়স্ক গিয়েছিলাম। জানি না ঠিক। আমরা গাড়ি ধাওয়া করেছিলাম। যানজট না হয় তা দেখছিলাম।''

আরও একটা মৃত্যুর পর শেষমেশ হুঁশ ফিরেছে প্রশাসনের। যান নিয়ন্ত্রণে শুরু হয়েছে কড়াকড়ি। রাস্তায় তৈরি হয়েছে স্পিড ব্রেকার। প্রশ্ন উঠছে, কিন্তু এই তৎপরতা আগে দেখা গেলে ফুটফুটে এক শিশুকে অকালে চলে যেতে হত কি? দুই বাসের চালক অমরনাথ চৌধুরী এবং সঞ্জয় দত্তকে গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত হওয়া ২ টি বাসের মধ্য়ে একটি চাকার অবস্থা শোচনীয়। এই রকম বাস রাস্তায় নামে কী করে? আরও বড় দুর্ঘটনায় আর বেশি মানুষের প্রাণ গেলে তার দায়িত্ব কে নিত? উঠছে এইসব প্রশ্নও। প্রশ্ন ও সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় শিশুর মায়ের মাথায় হেলমেট থাকলেও দুই শিশুর মাথায় হেলমেট ছিল না। পুলিশের সুরে সুর মিলিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রীও।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।    


আরও পড়ুন: Sanjay Chakraborty Arrest: যৌন হেনস্থার অভিযোগ, গ্রেফতার পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর ভাই সঙ্গীত শিল্পী সঞ্জয় চক্রবর্তী