রাজীব চৌধুরী, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, শুভেন্দু ভট্টাচার্য, সন্দেশখালি: দফায় দফায় বেপরোয়া হামলা। ED অফিসারের সঙ্গে সন্দেশখালিতে তল্লাশিতে গিয়ে আক্রান্ত হল CRPF-ও। কিন্তু তারপরেও সংযম দেখিয়ে এলাকা ছাড়ল কেন্দ্রীয় বাহিনী। অনেকেরই প্রশ্ন, সন্দেশখালিতে কি শীতলকুচির পুনরাবৃত্তি ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল? এটাও কি কোনও পরিকল্পিত ফাঁদ ছিল? সোশ্য়াল মিডিয়ায় তৃণমূলকে আক্রমণ করে এমন ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও এই বর্বর হামলাকে প্রতিবাদের ঝড় বলে দাবি করেছেন শশী পাঁজা।
"জনগণ আমার রাজত্বের গৌরব ও সমৃদ্ধি দেখে মুগ্ধ ছিল, শেষে তুমি তা বিষিয়ে দিও না। সুপুত্রের মতো কাজ করো, যেন তোমার নাম-যশ চিরস্থায়ী হয়।" যমুনাদের ধারে বন্দি মোগল সম্রাট শাহজাহান, ছেলে ঔরঙ্গজেবকে চিঠি লিখে এই আর্জিই জানিয়েছিলেন। সেই শাহজাহান যাঁর রাজত্বকালে মোগল সাম্রাজ্য শক্তি ও আড়ম্বরের চরম শিখরে উন্নীত হয়েছিল বলে মনে করেন বহু ইতিহাসবিদ!
আর শুক্রবার এই বাংলার বুকে এক রক্তাক্ত, নৃশংস, ভয়ঙ্কর, বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল আরেক শেখ শাহজাহানের নাম! সন্দেশখালির বাহুবলী তৃণমূল নেতা! সন্দেশখালিতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা যখন ইডি-র ওপর হামলা চালাচ্ছে তাঁদের রক্তাক্ত করে দিচ্ছে তখন সেখানে দেখা যায়নি কোনও পুলিশকর্মীকে। এনিয়ে বসিরহাটের এসপি-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কার্যত ED-র ঘাড়ে দায় ঠেলেন।
আর এখানেই নানা মহলে প্রশ্ন শুক্রবারের হামলা গোটাটাই কি পরিকল্পিত? প্ররোচনা? ফাঁদ পাতা হয়েছিল? সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী যদি সংযম না দেখাত, যদি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে না যেত, যদি দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে তারা পাল্টা গুলি চালাত এবং তাতে কয়েকজনের প্রাণ যেত তাহলেই কি বদলে যেত রাজনৈতিক অঙ্ক?
X হ্য়ান্ডলে, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে ট্য়াগ করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ED আধিকারিক এবং CRPF জওয়ানদের ওপর জঘন্য হামলার প্রধান কারণ আপনি। এরপর, CRPF-কে ট্য়াগ করে তিনি লেখেন, আমি জওয়ানদের এই পরিণত মানসিকতা, সাহসের প্রশংসা করি। প্রচণ্ড চাপের মধ্য়ে শান্ত থেকে, এমনকী জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও, ক্ষিপ্ত জনতার উদ্দেশে তাঁরা গুলি চালাননি। ফের মমতার বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে ট্য়াগ করে তিনি লিখেছেন, সাহসী জওয়ানরা আপনার (মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের) ধূর্ত পরিকল্পনাকে ব্য়র্থ করেছে। এবার গুলি চললে, ফের শীতলকুচির মতই পরিস্থিতি হত।
আজ যদি ক্ষিপ্ত জনতার মধ্য়ে একজনেরও মৃত্য়ু হত, তাহলেই মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় এবং তাঁর পার্টির সমস্ত নেতারা সীমাহীন এই দুর্নীতি এবং দোষীদের পাকড়াও করে যে তদন্তপ্রক্রিয়া চলছে, তার থেকে সফলভাবে মনোযোগ ঘুরিয়ে দিতেন।
আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি বলছেন, এরা মানুষকে খেপিয়ে দিয়ে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শীতলকুচিতে দেখুন, কীভাবে মানুষকে খেপিয়ে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। এক্ষেত্রেও মানুষকে ক্ষেপিয়ে যেভাবে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন
তৃণমূল বিধায়ক ও নারী শিশুকল্য়াণমন্ত্রী শশী পাঁজা বলছেন, সন্দেশখালিতে যে ঘটনাটা হয়েছে, এলাকার মানুষকে তপ্ত করেছেন, বিরক্ত করেছেন, যাঁরা কেন্দ্রীয় ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সিস, যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের পক্ষ থেকে। তাই সেখানে একটা প্রতিবাদের ঝড় উঠল।
ইডি সূত্রে দাবি, হামলাকারী দুষ্কৃতীদের অনেকের হাতে অস্ত্র ছিল। তাই পুলিশের ওপর ভরসা না রেখে এই ঘটনা নিয়ে NIA তদন্তের দাবিও জানানো হতে পারে। ইতিমধ্য়ে কলকাতা থেকে দিল্লিতে ED-র সদর দফতরে দু'দফায় রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। গোটা ঘটনার ফুটেজ সংগ্রহ করে ED-র তরফেও হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।