কলকাতা : গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে সন্দেশখালিতে (Sandeshkhali Incident) শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হয়েছিল ED অফিসারদের। তারপর থেকে উঠে আসে একের পর এক অভিযোগ। কার্যত জনরোষ তৈরি হয় শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। একের পর এক 'কীর্তি' সামনে আসে এই দৌর্দণ্ডপ্রতার নেতার। শেষমেশ মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতারি। আর এবার শেখ শাহজাহানের প্রায় ১৩ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হল। ভেড়ি, কলকাতায় জমি-সহ ১৪টি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি। আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইনে শেখ শাহজাহানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। শেখ শাহজাহানের ২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় এই সংস্থা।


এদিকে হাইকোর্টের ডেডলাইন পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আজ খালি হাতে ফিরতে হল সিবিআইকে। শেখ শাহজাহানকে হাতে পায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সুপ্রিম কোর্টে মামলাকে হাতিয়ার করে সিবিআইকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ । সূত্রের খবর, ভবানীভবনে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যেতে হয়েছে সিবিআইকে। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেছে এই 'যুক্তি' দিয়ে সিআইডি শেখ শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে দেয়নি।


সন্দেশখালির ঘটনায় কার্যত উত্তাল গোটা দেশ। গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে সন্দেশখালিতে (Sandeshkhali Incident) শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেছিল ED। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। ওই বাড়িতে ঢোকার আগেই ED অফিসার এবং CRPF জওয়ানদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় একাধিক দুষ্কৃতী। ইডি অফিসারের মাথা ফাটে। প্রাণ বাঁচাতে টোটোয় চেপে পালান তাঁরা। অভিযোগ, সেই হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানই। কিন্তু সেই শেখ শাহজাহানের হদিশ পায়নি রাজ্য পুলিশ। যদিও আগাম জামিনের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। মামলাকারী হিসেবে ওকালতনামায় সই করেছেন। তবুও পুলিশ তাঁর টিকি ছুঁতে পারেনি। লাগাতার বিক্ষোভের জেরে শেষমেশ ২৯ ফেব্রুয়ারি সকালে মিনাখাঁ থেকে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যে এসে সুর চড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।


এহেন সন্দেশখালির ঘটনায় অবিলম্বে শেখ শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ইডির উপরে হামলার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আজই বিকেল ৪.৩০টার মধ্যে শেখ শাহজাহানকে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে সিবিআইকে নথি দেওয়ারও নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।


সন্দেশখালিকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, '৫০ দিন পালিয়ে থাকার পর ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন শেখ শাহজাহান। শেখ শাহজাহান একজন সাধারণ নাগরিক নন, তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। যে রাজনৈতিক দলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটা রাজ্য়ের শাসক দল। ন্য়ায়বিচারের স্বার্থে, স্থানীয়দের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যেই সিবিআই।'


হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি শুনানির আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তাতে সাড়া দেয়নি শীর্ষ আদালত (Supreme Court) । রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে যেতে বলেন বিচারপতি সঞ্জীব খন্না । কোনও নির্দেশ না দিয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অর্থাৎ, আজ শাহজাহানকে হস্তান্তর করার ছিল । কিন্তু, খালি হাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ফিরতে হয়েছে।