কলকাতা: থামল সুর ঝঙ্কার। মঙ্গলের সন্ধ্যায় চলে গেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay Demise)। রেখে গেলেন গান আর অজস্র স্মৃতি। গীতশ্রীর প্রয়াণে শোকের ছায়া সব মহলে। এদিন গীতশ্রীর স্মৃতিচারণায় পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী বলেন,"কোনও ভাষা তো নেই। সবাই একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন কিন্তু দুঃখজনক। তিনি আমার গুরু বোন ছিলেন। দীর্ঘদিন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার একসঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। যাওয়ার আগে দুঃখও পেয়ে গিয়েছেন। খুব খারাপ লেগেছে। ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা কোনও ভাষা দিয়ে ব্যক্ত করার নয়। গানের স্বপ্ন দেখাবার মানুষ চলে গেলেন। অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলার আকাশে মাতৃসুলভ নক্ষত্রের পতন। ওঁকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না। উনি অমর হয়ে থাকবেন।'' সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা বলেন, "আমাদের মায়ের মতো ছিলেন। কোনও আতিশয্য ছিল না। এত ধরনের গান গেয়েছেন। আমাদের মাথার উপর থেকে ছাদ চলে গেল।'' 


বাংলা গান আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক সোনালি আকাশে সন্ধ্যা ঘনাল। নিভল আলো। চলে গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay Demise)। ১৯৩১-এর আশ্বিন মাসে শিউলি ঝরা সময়ে জন্ম তাঁর। তাঁর বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন সু-গায়ক। দুর্দান্ত টপ্পা গাইতেন তাঁর মা হেমপ্রভা দেবী। মা-বাবার কাছেই ছোটবেলায় সুরের তালিম শুরু। গল্পদাদুর আসরে গান গেয়ে পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন পাঁচ টাকা। 


১৯৪৫ সালে তাঁর প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। আর তাঁর পুজোর গান প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। সেবছর সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুরে পবিত্র মিত্রর লেখা দু’টি গেয়েছিলেন তিনি, ‘কার বাঁশি বাজে’ আর ‘কেন তুমি দূরে চলে যাও গো।’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত জীবনের প্রথম দিকে যে গানগুলি বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হল ‘ওগো মোর গীতিময়।’ রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে কমল ঘোষের লেখা এই গানটি প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে। এরপর সন্ধ্যা গাইলেন সলিল চৌধুরীর সুরে অবিস্মরণীয় দু’টি গান ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ আর ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা।’ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা গান...সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বিস্তার অলঙ্ঘনীয়। ঘনিষ্ঠদের কাছে নিজের একটা অপূর্ণ ইচ্ছের কথাও মাঝে মধ্যেই বলতেন তিনি। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে আর বেশ কয়েকটি লং প্লেয়িং ডিস্ক করার স্বপ্ন ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।