কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, পূর্ণেন্দু সিংহ ও সমীরণ পাল: কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক অনুমোদন দিলেও সর্বশিক্ষা অভিযানে রাজ্যের প্রাপ্য মিলছে না বলে অভিযোগ। এবার কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের বিরুদ্ধে সরব হলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। তাঁর অভিযোগ, পিএমশ্রী প্রকল্পে রাজ্য মউ সই করেনি বলেই এমন শাস্তি। বঞ্চনার অভিযোগ যদিও উড়িয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার (Subhas Sarkar)। তিনি জানালেন, পিএমশ্রী স্কুলে সই করতেই হবে। (Sarva Shiksha Abhiyan)
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এবার শিক্ষাক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ উঠল। সর্বশিক্ষা অভিযানের আওতায় রাজ্যের প্রাপ্য না দেওয়ার অভিযোগে সরব হলেন ব্রাত্য। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক অনুমোদন এবং শিক্ষা মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ অর্থ বিভাগ সবুজ সঙ্কেত দেওয়া সত্ত্বেও সর্বশিক্ষা অভিযান খাতে রাজ্য সরকারের প্রাপ্য তৃতীয় কিস্তির টাকা দিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রক।
শুক্রবার এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন ব্রাত্য। তিনি লেখেন, "স্পষ্ট ভাবে না বললেও শোনা যাচ্ছে যে, পিএমশ্রী প্রকল্পের রাজ্য সরকার মউ সই করেনি বলেই এই 'শাস্তি'। সম্পূর্ণ অন্য একটি প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে না চাওয়ার সঙ্গে অপর একটি প্রকল্পের টাকা ছাড়ার কোনও
সম্পর্ক নেই। এই কাজ সমপূর্ণ অনৈতিক এবং অবৈধ। তাছাড়া, যেখানে রাজ্যের প্রদত্ত অর্থের ভাগ ৪০%, সেখানে প্রকল্পটির নাম কেন প্রধানমন্ত্রীর নামে রাখতে হবে?"
আরও পড়ুন: Aparupa Poddar: 'ভোটে লড়ার টাকা নেই বলে এবার টিকিট পেলাম না', বিস্ফোরক অপরূপা
এবিপি আনন্দেও শিক্ষায় বঞ্চনা নিয়ে মুখ খোলেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, "এরকম আশ্চর্য তুঘলকি কারবার আমি দেখিনি। আমাদের রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরে সর্বশিক্ষা কমিশন স্কুল শিক্ষা দফতরের যে ৭৮৫ কোটি টাকা প্রাপ্য কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে, যেটা আমাদেরই করের টাকা। অর্থ মন্ত্রক অনুমোদন দিয়ে দিলেও, কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর এই টাকাটা আমাদের জন্য বরাদ্দ করছেন না বা মন্ত্রী সই করছেন না। আমি, আমাদের রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব এবং শিক্ষাসচিব বার বার চিঠি লিখেছি। আমাদের দফতর থেকে বার বার তাগাদা গিয়েছে। তাও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী কোনও অজ্ঞাত কারণে টাকাটা আটকে রেখেছেন।"
অন্য দিকে, বিজেপি আগেই অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রের পিএমশ্রী সকুল এবং পিএম ঊষা প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা থেকে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী সুভাষ জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতি অনুযায়ী, দেশের প্রতি ব্লকে একটি করে মডেল স্কুল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই মডেল সকুল ব্লকের সব সকুলগুলোকে নেতৃত্ব দেবে। সারা দেশে এমন ১৪ হাজার ৫০০টি মডেল সকুল তৈরির জন্য কেন্দ্রের ব্যয় হবে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সুভাষের অভিযোগ, রাজ্য সরকার পিএমশ্রী স্কুলের বৈঠকে যোগ তো দেয়ইনি, মউ পর্যন্ত স্বাক্ষর করেনি।
এ নিয়ে সুভাষের বক্তব্য, "পিএমশ্রী স্কুল নিয়ে রাজনীতি করার কারও জায়গা নেই। পিএমশ্রী স্কুল তার মধ্যে দিয়ে রাজ্যের সমস্ত স্কুলকে আরও শক্তিশালী করে। পিএমশ্রী স্কুলে সই তো করতেই হবে। কোনও বঞ্চনার প্রসঙ্গ নেই। নিজেরা ভুল করছি, নিজেরা রাজনীতি করছি। সেখানে এটার কোনও অর্থই হয় না।"
গোটা বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি-কে একযোগে বিঁধেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "অনেক বার আমরা বলেছি, একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। শ্বেতপত্র প্রকাশ করে না। এখন ভোট এসেছে, এখন এক একদিন, এক একটা কথা বলবে। বিজেপি বলবে, তৃণমূল কী কী করেছে, আর তৃণমূল বলবে বিজেপি কী কী করেছে। মানুষ বুঝতে পারছে, বিজেপি-তৃণমূল মিলিয়ে মানুষের ভবিষ্যতের সর্বনাশ করছে, শিক্ষার সর্বনাশ করছে, কাজের সুযোগের বারোটা বাজাচ্ছে। এটা মানুষ বুঝতে পারছেন।"
১০০ দিনের কাজ থেকে আবাস যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে আর্থিক বরাদ্দ আটকে রাখার অভিযোগে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি-কে লাগাতার আক্রমণ করছে রাজ্যের শাসকদল। অন্য দিকে, শিক্ষায় নিয়োগে দুর্নীতি ইস্যুতে তোলপাড় চলছে রাজ্যে। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, শাসক-বিরোধী সংঘাতের পারদ ততই চড়ছে। এই প্রেক্ষিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিবাদের কেন্দ্রে এবার সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকা।
ব্রাত্য জানিয়েছেন জানিয়েছেন, পিএমশ্রী প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের নৈতিক আপত্তি রয়েছে কারণ এতে দেশের সংবিধান স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অস্বীকার করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে এই টাকা না ছাড়ার বিষয়টি একটি অত্যন্ত বেআইনি, অগণতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারী এবং গা-জোয়ারি কাজ বলে রাজ্য সরকার মনে করছে।