ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: বীরভূমে বিজয়া সম্মিলনীতে ফের সামনে এসে পড়ল অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখের ঠান্ডা লড়াই। সাংসদের ভাষণ চলাকালীনই স্লোগান-পাল্টা স্লোগান দিতে শুরু করলেন দুই নেতার অনুগামীরা। বাধ্য হয়ে বক্তব্য থামিয়ে দিতে হল শতাব্দী রায়কে।
বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। তবে বিজয়া সম্মিলনীকে ঘিরে সেই দ্বন্দ্বই আরও প্রকট হয়ে উঠল! তৃণমূল সাংসদের ভাষণ চলাকালীনই শুরু হল দু'পক্ষের স্লোগান-যুদ্ধ...বাধ্য হয়ে বক্তব্য থামিয়ে দিতে হল শতাব্দী রায়কে। শনিবার মুরারইয়ে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী ছিল। বক্তব্য রাখছিলেন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। মঞ্চে তখন বসে রয়েছেন তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক অনুব্রত মণ্ডল। ঠিক সেইসময় সেখানে পৌঁছন বীরভূমের জেলা সভাধিপতি ও জেলা রাজনীতিতে পরিচিত অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী বলে পরিচিত কাজল শেখ। তাঁকে দেখেই স্লোগান দিতে শুরু করে দেন তাঁর অনুগামীরা। পাল্টা অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীরাও তাঁর ছবি হাতে স্লোগান দিতে থাকেন।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, বাধ্য হয়ে ভাষণ থামিয়ে দিতে হয় শতাব্দী রায়কে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে, মঞ্চ থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে কড়া বার্তা দেন তৃণমূল সাংসদ। বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, 'ভাল ফলের জন্য আমাদের দরকার একসঙ্গে হওয়া। তাই যদি কেউ মনে কর, যে আমি বিরোধিতা করব, যদি কেউ মনে কর যে এত বড়, তোমার কী হচ্ছে, তোমার কাছে লোক যাচ্ছে কারণ তৃণমূলের নাম আছে তোমার সঙ্গে, তুমি যে পোস্টটা হোল্ড করছ, তৃণমূলের বলে। যে প্রিয় নেতা থাকতে চাইবেন সবাইকে নিয়ে চলুন, কোনও গোষ্ঠী, গ্রুপ তৈরি করবেন না। এতে কোনও লাভ হয় না।'
এবারই প্রথম নয়, গত বছরও এই বিজয়া সম্মিলনী ঘিরেই দুই নেতার বিবাদ সামনে এসেছিল। অনুব্রত মণ্ডলের পাশে কোর কমিটির বাকি সদস্যদের দেখা গেলেও অনুপস্থিত ছিলেন কাজল শেখ! অনুব্রত মণ্ডলের পর আর কাউকে জেলা সভাপতি পদে বসায়নি তৃণমূল। বর্তমানে বীরভূমে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারপরেও যে দলের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই থামানো যাচ্ছে না, তার প্রমাণ মিলেছে সদ্য প্রকাশিত দলের সাংগঠনিক রদবদলের তালিকাতেও। খয়রাশোল, দুবরাজপুরের পর এবার নলহাটি ২ নম্বর ব্লক এবং ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকেও কোনও একজনকে সভাপতি করা যায়নি। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমিটির ওপর।
তবে যে সিউড়ি ২ ব্লক নিয়ে অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছিল, সেখানে কাজল শেখের ঘনিষ্ঠ নুরুল ইসলামকেই ব্লক সভাপতি পদে রেখে দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সবমিলিয়ে বিধানসবা ভোটের আগে লালমাটির জেলায় বারবার সামনে চলে আসছে শাসকদলের দ্বন্দ্ব!