সমীরণ পাল, বিটন চক্রবর্তী ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা: নিয়োগ থেকে গরুপাচার, শাসকদলের নেতাদের ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল রাজ্য। সেই আবহে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য। পদে থেকে দলের কেউ কেউ দুর্নীতি করেছেন বলে এ বার কার্যত মেনে নিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে যাঁদের, পচা আপেলের সঙ্গে তাঁদের তুলনাও টানলেন। তাঁর এই মন্তব্যে তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টাই করলেন সৌগত। তাই এ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। 


দমদমে প্রকাশ্য সভায় দুর্নীতির ইস্যুতে মুখ খোলেন সৌগত। তিনি বলেন, "আমাদেরই দলের কেউ কেউ লোক, তাঁরা পার্টির পদ নিয়ে তাঁরা দুর্নীতি করেছে। তাঁরা ধরা পড়েছে। আমরা বলেছি, আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াব না।"


নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা প্রকল্প, ভূরি ভূরি অভিযোগ ওঠায়, স্বভাবতই অস্বস্তিতে তৃণমূল। তারওপর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে তৃণমূল বিধায়ক, অথবা বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রত মণ্ডল, সকলেই এখন জেলে। তার জেরে দলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন একাধিক শাসক নেতা। এই পরিস্থিতি পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামলেন সৌগত। 

দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি কম্বলদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ। সেখানে দলীয় পদাধিকারীদের একাংশের দুর্নীতির কথা স্বীকার করে, তাঁদের পচা আপেল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। তাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আমাদেরই দলের কেউ কেউ লোক, তাঁরা পার্টির পদ নিয়ে তাঁরা দুর্নীতি করেছে। তাঁরা ধরা পড়েছে। আমরা বলেছি, আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াব না। দু'টো পচা আপেল, সেগুলোকে আমরা ফেলে দেব, বাকি আপেলগুলোকে রক্ষা করব। আমাদের ৯৮ শতাংশ কর্মী সৎ, নিষ্ঠাবান।"


এ নিয়ে যদিও সৌগতকে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, "তাঁরা স্বীকার করছেন যে, দল চোরে ভর্তি। আমরা বলছি, তৃণমূলে এখন যত বড় নেতা, তত বড় চোর। তলার দিকে তাকাচ্ছেন কেন। উপরের দিকে তাকান। পরিষ্কার ওপরের দিকে করতে হবে। কালীঘাটে, পিসি ভাইপো যেখানে বসে আছেন।"

নারদ স্টিং অপারেশনের উল্লেখ করে সৌগতকে আক্রমণ করেছে বিজেপি-ও। দলের রাজ্য সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, "এই দু'টো পচা আপেলের মধ্যে সৌগত বাবু নিজের নামটা রেখেছেন কি! আমরা তো টিভির পর্দায় খাম নিতে দেখেছিলাম। সৌগত বাবুকে প্রশ্ন করব খামের ভিতর আপেল ছিল! পচা আপেল নাকি ভালো! উনি কখন বোম বানানোর ফর্মুলা আবিষ্কার করেন, কখন আপেল তথ্য বের করেন, উনি জানেন।"


যদিও সৌগতর মন্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, "সৌগত রায় তো ঠিকই বলেছেন। ২-১টা তো আছে এরকম। ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। যেটা বিচ্যুতি হয়েছে, সেটা বলেছে। ভুল তো কিছু বলেননি।"



দুর্নীতি ইস্যুতে আগেও মুখ খুলেছিলেন সৌগত। সে বার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দলের বিড়ম্বনা বলে মেনে নেন তিনি। যদিও অনুব্রত মণ্ডলকে সেই তালিকায় রাখেননি তিনি।। কিন্তু এদিন দু'টি পচা আপেল বলতে তিনি কাকে কাকে বোঝালেন, সেই জল্পনা শুরু হয়েছে।