পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: নির্বাচনী মরসুমে ব্যক্তিগত টানাপোড়েন খবরের শিরোনামে নিয়ে এসেছিল তাঁদের। প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলা থেকে, সম্পর্কে ইতি টানার ঘোষণা, চোখের সামনেই ঘটেছিল সবকিছু। তার পর এক বছর কেটে গিয়েছে, নির্বাচনী তাপ-উত্তাপও ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। পারস্পরিক দূরত্ব তবু ঘোচেনি। এ বার আদালতে পারস্পরিক সম্মতিতেই বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জমা দিলেন বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ এবং তৃণমূল নেত্রী সুজাতা মণ্ডল। আর দাম্পত্যে ইতি টানার মুহূর্তেও তাই সুজাতা জানিয়ে দিলেন, সুতো আগেই ছিঁড়ে দিয়েছে, বাকি শুধু আইনি প্রক্রিয়া।
মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলা আদালতে পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানালেন সৌমিত্র-সুজাতা। এ দিন সশরীরে আদালতে হাজির হননি সৌমিত্র। তাঁর হয়ে আদালতে আবেদন জমা দেন আইনজীবী। তবে সুজাতা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সম্পর্কের এমন পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন করলেন বলেন, "ডিভোর্স তো হয়েই গিয়েছে! শুধু আইনি সিলমোহর পড়া বাকি।" তবে আইনজীবী মারফত বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানালেও, এ দিন সরাসরি তা নিয়ে মুখ খোলেননি সৌমিত্র।
রাজনীতির ময়দানে চারহাত এক হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তাই সৌমিত্র এবং সুজাতাও বঙ্গ রাজনীতির বুকে 'পাওয়ার কাপল' হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু আচমকাই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়ে ওঠেন বিষ্ণুপুরের তৎকালীন সাংসদ সৌমিত্র এবং সুজাতা। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর থেকেই সৌমিত্রকে প্রার্থী করে বিজেপি। কিন্তু আইনি জটিলতায় মিজের কেন্দ্রে প্রচার করতে যেতে পারেননি সৌমিত্র। সেই সময় স্বামীর হয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন সুজাতা। প্রচারের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব কার্যত একাহাতেই সামলান।
সুজাতার সেই উদ্যমই বৈতরণী পার করতে সাহায্য করে সৌমিত্রকে। কিন্তু সেই নির্বাচনের ফোল ঘোষণার পর পরই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের রসায়ন পাল্টে যেতে শুরু করে। তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। পরিস্থিতি এমন হয় যে সৌমিত্রর থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন সুজাতা। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার বিজেপি ছেড়ে ফিরে আসেন তৃণমূলেও, যা তাঁদের সম্পর্কে শেষ পেরেক পুঁতে দেয় বলে মনে করেন অনেকেই। কারণ তৃণমূলে সুজাতার প্রত্যাবর্তনের পরই ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক করে কেঁদে ভাসান সৌমিত্র। জানান, সুজাতার সঙ্গে আর থাকা সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে। বিয়েতে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
নির্বাচনী মরসুমে সৌমিত্র-সুজাতার সম্পর্কের এই টানাপোড়েন এবং প্রকাশ্যে তা নিয়ে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতিতে আমোদ পেতে শুরু করেন নিন্দুকেরা। কিন্তু নির্বাচন মিটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যবনিকা পতন হতে চলেছে বলে ধরে নেন অনেকেই। কিন্তু তার পর সময় গড়ালেও, সৌমিত্র-সুজাতার ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগার কোনও ইঙ্গিত চোখে পড়েনি। বরং এ বার বিবাহ বিচ্ছেদে আইনি সিলমোহর দিতেই উদ্যত হলেন দু'পক্ষ। আলাদা থাকার পাশাপাশি এতদিন কন্টেস্টেড ডিভোর্সের মামলা চলছিস তাঁদের মধ্যে। এ বার পারস্পরিক সম্মতিতে পাকাপাকি ভাবে বিয়েতে ইতি টানার সিদ্ধান্তই নিলেন তাঁরা।