শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: সকাল ১১ টাতেও খোলেনি স্কুলের গেট। আসেননি একজন শিক্ষকও। দিদির দূত কর্মসূচিতে দিনহাটার (Dinhata) বসগীরের ধাম এ.পি. স্কুলে গিয়ে হতবাক প্রাক্তন তৃণমূল (TMC) সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। সেখান থেকেই ফোন করলেন জেলা স্কুল পরিদর্শককে। স্কুল পরিদর্শক জানিয়েছেন, স্কুলের ৪ জন শিক্ষককেই মঙ্গলবার শোকজ করা হবে।


সোমবার 'দিদির সুরক্ষা কবজ' কর্মসূচিতে দিনহাটার পুটিমারি ১ পঞ্চায়েত এলাকায় দিদির দূত হিসেবে যান কোচবিহারের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। সকাল ১১টা নাগাদ বসগীরের ধাম এ.পি. স্কুলে পৌঁছলে দেখেন, গেটে তালা ঝুলছে। ৫ মিনিট পরও দেখা যায়নি একজন শিক্ষককেও। এর পরই, প্রথমে সেই সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক ও জেলা স্কুল পরিদর্শককে ফোন করে অভিযোগ জানান প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। 


১৫ মিনিট পরও বদলায়নি ছবিটা। স্কুল পরিদর্শককে ফোন করে ওই ৪জন শিক্ষককে শোকজ করতে বলেন তিনি। ততক্ষণে দিদির দূতকে ঘিরে স্কুলের সামনে উঠে এসেছে গোটা গ্রাম। অভিভাবকদেরও অভিযোগ, একদিন বলে নয়, রোজই এমনই তো হয়। কথা-বার্তার মধ্যেই একে একে স্কুলে ঢোকেন ৪ জন শিক্ষক। যদিও, প্রতিদিন দেরিতে আসার অভিযোগ মানতে চাননি প্রধান শিক্ষক। স্কুল পরিদর্শক জানিয়েছেন, বসগীরের ধাম এপি স্কুলের ৪ জন শিক্ষককেই মঙ্গলবার শোকজ করা হবে।


স্কুলে আরও অরাজকতার ছবি


এই ছবিটা আবার অন্য জায়গার। সকুলের প্রধান শিক্ষক বিজেপি বিধায়ক। আর সেই প্রধান শিক্ষক নাকি প্রায়দিন সকুলেই আসেন না! দিদির দূত কর্মসূচিতে গিয়ে এমনই অভিযোগ শুনলেন সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বর্মা বাসুনিয়া। প্রধান শিক্ষকের গরহাজিরার কথা জানিয়ে ফোন করলেন স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রীকে। যদিও বিজেপি বিধায়কের দাবি, বেশিরভাগ দিনই স্কুলে যান তিনি। 


একইসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক। আবার সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক!একদিকে ভাতা মিলিয়ে বিধায়ক হিসেবে বেতন ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি! প্রতিমাসে আবার শিক্ষকতার জন্যও বেতন তোলেন! তিনি, কোচবিহারের শীতলকুচির বিজেপি বিধায়ক বরেনচন্দ্র বর্মন। তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ, নিয়মিত বেতন নিলেও স্কুলে তাঁর উপস্থিতি মর্জিমাফিক! দিকে দিকে তৃণমূলের দিদির দূতেদের ঘিরে যখন ক্ষোভ-বিক্ষোভে যখন সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। তখন কোচবিহারে দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি। 


শুক্রবার সকালে দিদির দূত কর্মসূচিতে বেরিয়ে জাটিগারা মাধবচন্দ্র বিদ্যাপীঠ স্কুল পরিদর্শনে যান সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বর্মা বাসুনিয়া। এই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক হলেন শীতলকুচির বিজেপি বিধায়ক বরেনচন্দ্র বর্মন। স্কুলের হালহকিকত সম্পর্কে জানতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ও বিজেপি বিধায়কের হাজিরা নিয়ে জানতে চান তৃণমূল বিধায়ক। 


বিজেপি বিধায়ক ও প্রধান শিক্ষকের গরহাজিরার অভিযোগ পেয়ে স্কুল থেকেই তাঁকে ফোন করেন সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক। বিজেপি বিধায়কের নামে নালিশ করতে এরপর সোজা শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে ফোন করে বসেন তৃণণূল বিধায়ক। কিন্তু, এতকিছুর পরও বিজেপির বিধায়ক-হেডমাস্টারমশাই কিন্তু সাফাই দিতে পিছপা হননি। সবমিলিয়ে স্কুলে স্কুলে এমন বেপরোয়া ছবিতে বাড়ছে চিন্তা।