প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: ২০১৪-র টেটে নিয়োগ দুর্নীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষ। চার্জশিটে দাবি করল ইডি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, শান্তনুর বাড়ি থেকে কলকাতা-সহ ১৭টি জেলার ৩৪৬ জন চাকরিপ্রার্থীর নামের তালিকা মিলেছে। এর মধ্যে বীরভূম থেকে ১৪৮, মুর্শিদাবাদ থেকে ৬৭, মালদা থেকে ২৬, কোচবিহার থেকে ১৮ এবং বর্ধমান থেকে ১৫ জন ছাড়াও বিভিন্ন জেলার চাকরিপ্রার্থীদের নাম রয়েছে। ইডি-র চার্জশিটে দাবি, শান্তনুর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়ে চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা তৈরি করেছিলেন কুন্তল। কুন্তলের কাছ থেকে সেই তালিকা নিয়ে শান্তনুর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন বীরভূমের বাসিন্দা সুখেন রানা ও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা সুজল আনসারি। চার্জশিটে এই ২ জনের নামও উল্লেখ করেছে ইডি।
বিভিন্ন এজেন্টের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন শীল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অয়ন শীলের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করেছেন কুন্তল ঘোষ। পাঁচটি সংস্থার মাধ্যমে দুর্নীতির টাকা পাচার করা হত। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে পেশ করা চার্জশিটে দাবি করল ED।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ধৃত প্রোমোটার অয়ন শীলের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করতেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। এর আগে চার্জশিটেও এই দাবি করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সোমবার বিশেষ ED আদালতে ১১৩ পাতার চার্জশিট পেশ করে তারা জানিয়েছে,শুধু ২০১৪-র টেট নয়, ২০১২ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের অবৈধভাবে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রেও, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অয়ন শীলের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন কুন্তল ঘোষ।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীল, চারজনই জেলবন্দি রয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জমা দেওয়া চার্জশিটে ED দাবি করেছে, বিভিন্ন এজেন্টের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন শীল।
এমনকী শান্তনুর নির্দেশেই কুন্তলকে ১৯ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন আরেক ধৃত তাপস মণ্ডল।
এখানেই শেষ নয়, নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে কুন্তলের থেকে ১ কোটি টাকা নিয়েছিলেন শান্তনু। চার্জশিটে আরও দাবি করা হয়েছে,অয়ন শীল জেরায় স্বীকার করেছেন, ৪৫ কোটির মধ্যে ১৮ কোটি টাকা নিজে রেখেছিলেন এবং বাকি ২৬ কোটি টাকা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়েছেন। সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল কুন্তল ঘোষের নির্দেশে।
সম্প্রতি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ ওই ব্যবসায়ী ও তৃণমূল নেতা সন্তুর মহেশতলার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছে CBI. শান্তনুর DIP ডেভলপার্স ও ইভান কনস্ট্রাকশন এবং অয়নের
ABS ইনফোজোন শুক্লা সার্ভিস স্টেশন ও দ্য ফসিলস এই ৫টি সংস্থার কথা উল্লেখ করে চার্জশিটে ED দাবি করেছে, ওই সমস্ত সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পাচার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অয়নের সম্পত্তির খতিয়ান তুলে ধরে ED জানিয়েছে, যে স্থাবর সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে - তার বাজার মূল্য ১০ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। গাড়ি রয়েছে ৬৪ লক্ষ টাকার। শেয়ার রয়েছে ২৩ লক্ষ টাকার।
এছাড়াও চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ABS টাওয়ার নামে বহুতলেই অয়নের ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এমনকী অয়নের বিরুদ্ধে OMR শিট বিকৃত করার অভিযোগ তোলা হয়েছে চার্জশিটে। অন্যদিকে শান্তনুর ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকার ১২টি অস্থাবর সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বলে দাবি করেছে ED. এ ছাড়াও ৭টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৪৭ লক্ষ টাকা।
চার্জশিট পেশ করে এদিন আদালতে ED-র আইনজীবী মন্তব্য করেন, একজন দুর্নীতিগ্রস্ত তার দেশকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে। ED-র নজরে আছেন অয়ন ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তীও। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট এবং একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে।