আবীর দত্ত, জয়ন্ত পাল ও সমীরণ পাল, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা:  দলের একাংশের ক্ষোভকে এবার দিল্লির দরবারে (BJP Central Leadership) পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর (BJP MP Shantanu Tkakur)। দিল্লি যাওয়ার পথে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। বললেন,  ‘৩০ বছর পার্টি করার পর বরখাস্ত করা হয়েছে, এরা কোথায় যাবে?’ এ’নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।


দলের রাজ্য ও জেলা কমিটিতে মতুয়াদের ব্রাত্য রাখা, একাধিক পুরনো মুখকে বাদ দেওয়া। একের পর এক পিকনিক, রুদ্ধদ্বার বৈঠক। সেই টানাপোড়েনের আবহে দল থেকে ২ নেতাকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া। এই সব কিছু নিয়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।সেই ক্ষোভকে এবার দিল্লির দরবারে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।


সম্প্রতি, বিজেপির রাজ্য কমিটিতে রদবদল নিয়ে চূড়ান্ত অসন্তোষ তৈরি হয়। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছয় যে, রীতেশ তিওয়ারি ও জয়প্রকাশ মজুমদারকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রাজ্য বিজেপি।দিল্লি যাওয়ার আগে শনিবার রাতে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। 


সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। তার আগে, এদিন দিল্লি যাওয়ার পথে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন শান্তনু ঠাকুর। তিনি বলেছেন, এরা ৩০ বছর ধরে পার্টিটা করছে। এদের পার্টি থেকে হঠাৎ বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। এরা কোথায় যাবে? তৃণমূল বা সিপিএমে তো যায়নি...বিজেপির মন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে বসেছেন, অসুবিধে কী আছে? সব বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হবে। এগুলো তো বাস্তব জিনিস।  সিএএ’র সময় কেটে গেছে, সেটা নিয়ে মাননীয় গৃহমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হবে। আমাদের একটা সংগঠন আছে, সেখান থেকেও চাপ আসে।


শান্তনুর বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, উনি দলের বিশিষ্ট নেতা ও মন্ত্রী। ক’দিন আগেই আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। অন্য বিধায়করা তাঁর কাছে যেতেই পারেন। উনিও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে যেতেই পারে। আমার আশা খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা মিটে যাবে।


বিজেপির রাজ্য সভাপতি যখন সমস্যা মেটাতে আলোচনার কথা বলছেন, তখন ফের সুর চড়িয়েছেন বিজেপি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নেতা রীতেশ তিওয়ারি। বলেছেন, মতবিরোধ দূর করার জন্য তিনি সভাপতি হিসেবে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? তিনি বলছেন আমরা বসে মিটিয়ে দেব। শোকজের আগে কোনও একটি ফোনও কাউকে করেছেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত। দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভার্চুয়াল চক্রবর্তীদের জন্য। তিনি প্রচারক নন, উনি প্রতারক।


এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।


সাংগঠনিক রদবদলের পাশাপাশি CAA নিয়েও ক্রমশ সুর চড়াচ্ছেন শান্তনু ঠাকুর।আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন মতুয়ারা। আর তা নিয়েই বিজেপিকে ফের নিশানা করেছে তৃণমূল। দলের সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন,  সিএএ নিয়ে তো কিছু হয়নি, মতুয়া সমাজকে ঠকিয়েছিল বিজেপি। বলেছিল সিএএ চালু করবে। এখনও বিধি তৈরি হয়নি। তঞ্চকতা করা হয়েছে। শান্তনু বুঝছেন ওঁর জনভিত্তি নষ্ট হচ্ছে, তাই চেষ্টা করছেন, এটা ওটা বলছেন।
রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই, সকলের নজর এখন শান্তনু ঠাকুরের দিল্লি সফরের দিকে।