কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: প্রয়াত বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র। আজ বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী অনাড়ম্বরভাবে আজ বিকেলেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে সিরিটি শ্মশানে।
ফুরলো জীবনের সব ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’। শেষ সব ‘পুতুলখেলা’। প্রয়াত শাঁওলি মিত্র। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিল্পজগতে শোকের ছায়া। শাঁওলি মিত্র শুধু বাংলা নয়, সারা দেশের শিল্পমহলে একটি বিশিষ্ট নাম। তাঁর প্রয়াণে একটি বর্ণময় যুগের অবসান হল।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের কন্যা শাঁওলি মিত্র। আজ বিকেল ৩.৪০ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ ছবিতে ‘বঙ্গবালা’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এছাড়াও তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন অসংখ্য নাটকে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘বিতত বীতংশ’, ‘নাথবতী অনাথবত্’, ‘পুতুলখেলা’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’, ‘হযবরল’, ‘পাখি’, ‘গ্যালিলিওর জীবন’, ‘ডাকঘর’, ‘যদি আর এক বার’।
২০০৩ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান শাঁওলি মিত্র। ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ২০১২ সালে অভিনয়ে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য পান ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান।
শাঁওলি মিত্র ছিলেন বাংলা থিয়েটার ও চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী। ২০১১ সালে তিনি রবীন্দ্র সার্ধশত জন্মবর্ষ উদযাপন সমিতির চেয়ারপার্সন ছিলেন।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় পরিবর্তনপন্থীদের অন্যতম মুখ ছিলেন শাঁওলি মিত্র। ২০১২ সালে মহাশ্বেতাদেবীর পদত্যাগের পর বাংলা অ্যাকাডেমির দায়িত্ব দেওয়া হয় তিনি। ২০১৭-র ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সেই পদ থেকে অব্যাহতি চান শাঁওলি মিত্র। তারপরই তাঁকে ওই পদে রাখতে শুরু হয় সরকারি তৎপরতা। ২০১৮ সালে বাংলা অ্যাকাডেমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শাঁওলি মিত্র।
বাবা শম্ভু মিত্র যেমন সবার আড়ালেই, অনাড়ম্বরভাবে চলে গিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই কাউকে না জানিয়ে শাঁওলি মিত্রও প্রয়াত হন। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, প্রয়াত হওয়ার পর যেন কোনওরকম আড়ম্বর না করা হয়। হাসপাতাল ভর্তি হতেও তাঁর অনীহা ছিল। অসুস্থতা সত্ত্বেও চিকিৎসা করাতে চাননি। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েই কাউকে খবর দেওয়া হয়নি। শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পর খবর প্রকাশ্যে আনা হল।