কলকাতা: রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন বা SIR-এর কাজ চলছে। তবে এবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন পিছিয়ে গেল। আগে যে নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়েছে, সেই তুলনায় সাত দিন পিছিয়ে গেল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন। নির্বাচন কমিশন এমনটাই জানাল। ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে বলে জানানো হয়েছিল আগে। তা পিছিয়ে এবার ১৬ ডিসেম্বর করা হল। ফলত চূড়ান্ত ভোটার তালিকাও দেরিতে বেরোবে, ১৪ ফেব্রুয়ারি। তবে শুধুমাত্র বাংলাতেই নয়, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২ রাজ্যেই পিছিয়ে গেল তালিকা প্রকাশের দিন। (SIR in Bengal)

Continues below advertisement

বাংলায় SIR নিয়েগোড়া থেকেই টানাপোড়েন। কাজের চাপে বুথ লেভেল অফিসারদের অসুস্থতা, মৃত্যুর খবর? যেমন উঠে এসেছে, তেমনই কমিশনের বিরুদ্ধে রাস্তায় অসন্তোষ বেড়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। সেই আবহেই বাংলায় খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন পিছিয়ে দেওয়া হল। কমিশন জানিয়েছে, ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ১৬ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। পাশাপাশি, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের দিনও পিছিয়ে গেল। আগে ঠিক ছিল, ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। এবার তা পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হল ১৪ ফেব্রুয়ারি। পাশাপাশি,  অভিযোগ জানানোর সময়সীমাও পিছনো হয়েছে। (SIR in West Bengal)

কমিশন জানিয়েছে, এনুমারেশন পিরিয়ড শেষ হবে ১১.১২.২৫-এ। রিঅ্যারেঞ্জমেন্ট অফ পোলিং স্টেশন্সের কাজ সম্পন্ন হবে ১১.১২.২৫-এ। আপডেশন অফ কন্ট্রোল টেবল এবং খসড়া ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে যথাক্রমে ১২ ও ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে ১৬ ডিসেম্বর। দাবিদাওয়া ও অভিযোগ জানানো যাবে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। সেই মতো শুনানি ও সিদ্ধান্তগ্রহণের কাজ শেষ করতে হবে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আগামী বছর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকার স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং কমিশনের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে । শেষে, ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে বাংলার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।

Continues below advertisement

SIR নিয়ে কাজের চাপ যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে BLO-রাও প্রতিবাদে শামিল হন। বার বার দিন পিছনোর দাবি উঠছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবির থেকেও। সময়সীমা বাড়ানোর দাবি উঠছিল লাগাতার। সেই আবহেই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন পিছোল কমিশন। আর তার জেরেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিনও পিছোল। কী কারণে এই সিদ্ধান্ত, তা যদিও প্রকাশ করেনি কমিশন। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ সামনে আসছিল যে, কয়েক লক্ষ ফর্ম সংগ্রহ করা যায়নি, ডিজিটাইজেশনের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। সেই কারণেই দিন পিছনো হল কি না, শুরু হয়েছে জল্পনা।

BLO-দের তরফে বার বার বলা হচ্ছিল যে, অনেক চাপ এসে পড়েছে। এখনও কাজ শেষ হয়নি, ডিজিটাইজেশন শেষ হয়নি।  পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত বাধাবিপত্তির সম্মুখীনও হতে হচ্ছিল BLO-দের। SIR নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলছিল তৃণমূল-সহ অন্য বিজেপি বিরোধী দলগুলিও। বার বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছিল নির্বাচন কমিশনকে। সেই আবহে রাজ্যে  ১২ জন অবজার্ভার এবং স্পেশাল রোল অবজার্ভার পাঠানো হয় রাজ্যে। সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তাঁরা। আর তার পরই দিন পিছনোর এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেষ পর্যন্ত BLO-দের দাবিই বৈধতা পেল বলে মনে করা হচ্ছে।

তৃণমূলও গোড়া থেকে সময়সীমা বাড়ানোর দাবি তুলে আসছিল। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কি বাধ্য় হল সময়সীমা বাড়াতে? এ নিয়ে প্রশ্ন করলে বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন দু'বছর সময় লাগে SIR করতে। তো দু'বছর সময় দেওয়া উচিত। আমরাও তো চাইছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মেনে দু'বছর করে দেওয়া হোক এবং রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে...যতদিন মেয়াদ আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী থাকতেন। তার পর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে SIR, ভোট যা করানোর কারনো হতো। আমরাও তো সেই দাবি করছিলাম। আমাদের কোনও অসুবিধে ছিল না। ওঁরা দু'বছর চেয়েছিলেন, এক সপ্তাহ হয়েছে। এটাকে কতটা মানবেন ওঁরা ভাববেন। আমাদের অসুবিধে নেই।" ফের কি সময় বাড়তে পারে? সুকান্ত বলেন, "সেটা কমিশন ঠিক করবে। EC ঠিক করবে, পিসি ঠিক করবে না। পিসির বিদায় হবে।"