শিবাশিস মৌলিক, সুমন ঘরাই, আশাবুল হোসেন, কলকাতা: রাজ্যে জোরকদমে চলছে SIR-এর প্রস্তুতি। এই আবহেই আজ নির্বাচন কমিশনকে তীব্র আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। উল্টোদিকে যে কোনও মুহূর্তে SIR করতে নির্বাচন কমিশনের বাধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে SIR সুষ্ঠুভাবে না হতে দিলে, রাজ্যে রাষ্ট্রপতিশাসন চালু হয়ে যাবে, হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর।SIR শুরুর আগেই দু'পক্ষের সংঘাত মনে করিয়ে দিয়েছে অগাস্ট মাসের কথা। সেইসময় ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগে ৪ অফিসার এবং ১ ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে সাসপেন্ড করে FIR দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। যা নিয়ে বিতর্কের জল গড়ায় দিল্লি পর্যন্ত।
আরও পড়ুন, এবার নদিয়ার ধুবুলিয়াতে অসমের NRC নোটিস! চিন্তায় সঞ্জু শেখ ও আরশাদ শেখের পরিবার
'SIR সুষ্ঠুভাবে না হতে দিলে, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া শেষ না হলে, রাজ্যে রাষ্ট্রপতিশাসন চালু হয়ে যাবে'
শুভেন্দু বলেন, SIR যে কোনও দিন, যে কোনও মুহূর্তে করতে নির্বাচন কমিশনের সামনেও আইনি কোনও বাধা নেই। BLO দের কাজের পরিবেশ, এবং কতটা সুস্থভাবে এই রাজ্যের প্রশাসন, এবং শাসকদল SIR করতে দেবে, তার উপর নির্ভর করছে, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত কবে বেরোবে।ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে যদি নির্বাচনী নির্ঘণ্ট না বের হয়, তাহলে আপনা আপনি রাষ্ট্রপতি শাসন অর্থাৎ রাজ্যপালের হাতে রাজ্য চলে যাবে' , মন্তব্য বিরোধী দলনেতার। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে ফাইনাল লিস্ট বের করতে হবে। হয় নাকি? স্বয়ং ঈশ্বরও পারবে না। এই মুহূর্তে রাজ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ টিম। sir-এর প্রস্তুতি নিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় দফায় দফায় বৈঠক করছে তারা। এই আবহেই বৃহস্পতিবার কমিশনকে তীব্র আক্রমণ করছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
ফের তৈরি হয়েছে সংঘাত। এর আগে গত ৫ অগাস্ট, মুখ্য় নির্বাচনী আধিকারিকের রিপোর্টের ভিত্তিতে, ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগে, ২ জন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ERO ২জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা AERO-কে সাসপেন্ড করতে মুখ্য়সচিবকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। এই ৪ জনকে সাসপেন্ড করতে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করতে নির্দেশ দেয় কমিশন। ময়নার এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধেও FIR দায়ের করতে বলে কমিশন।পাল্টা অফিসারদের পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়ান মুখ্য়মন্ত্রী।
সম্প্রতি মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছিলেন, ২ জন WBCS অফিসার, ওঁরা সাসপেন্ড করে দিল, নির্বাচন ঘোষণাই হয়নি। কী সাহস! এখন থেকে কী ভেবেছেন? এই NRC-র নাম করে, ব্য়াকডোরে যাকে ইচ্ছা অফিসারদের ভয় দেখাবেন? অফিসারদের পাশে সরকার ছিল, আছে এবং থাকবে। ৩ দিন পর ৮ অগাস্ট একেবারে সময় বেঁধে, কড়া চিঠি দিয়ে নবান্নর ওপর পাল্টা চাপ তৈরি করে নির্বাচন কমিশন। ফের মুখ্য়সচিবকে পাঠানো চিঠিতে কমিশনের সচিব লেখেন, কমিশনের নির্দেশ, এই অফিসারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন এবং ১১ অগাস্ট দুপুর ৩টের মধ্য়ে নির্দেশ পালন করা হয়েছে, এই রিপোর্ট দিন। এরপরও নির্বাচন কমিশন যে ব্য়বস্থার কথা বলেছিল, কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে তা নেওয়া হয়নি। এরপর ১২ অগাস্ট মুখ্য়সচিবকে চিঠি দিয়ে তাঁকে সটান দিল্লিতে ডেকে পাঠায় জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ১৩ অগাস্ট দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে সদর দফতরে যান মুখ্য়সচিব মনোজ পন্থ। অবশেষে ২১ অগাস্ট ৪ অফিসারকে সাসপেন্ড করা হলেও, কোনও FIR দায়ের করা হয়নি। অর্থাৎ ৪ জন সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ আংশিক মানে নবান্ন। আর ক্য়াজুয়াল ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের ক্ষেত্রে FIR ও সাসপেনশনের জোড়া নির্দেশ মানা হয়। এই পরিস্থিতিতে ফের একবার এসআইআর নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াল রাজ্য় সরকার।যার ফলে এসআইআর প্রক্রিয়া কতটা নিরপেক্ষভাবে করা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিজেপি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, বিহারে যেভাবে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করেছে, রাজনৈতিক দলগুলোরও অংশগ্রহণ ছিল তাই সেখানে ১০০ শতাংশ সফল হয়েছে। BLO-রা নির্ভয়ে প্রাণকে হাতে রেখে মানে বাঁচিয়ে তারাও বিহারের মতো SIR সব বুথে করতে পারবেন কিনা তারও আশঙ্কা আছে।