সমীরণ পাল, অনির্বাণ বিশ্বাস, সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: নিয়োগ-দুর্নীতি (recruitment scam) নিয়ে বিতর্কের ঝড় উসকে ফের ময়দানে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।  নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে ইতিমধ্যেই জেরবার শাসকদল। কারণ একের পর এক যোগসূত্র উঠে এসে তৃণমূলের হেভিওয়েটরা গ্রেফতার হয়েছে। আর সেই আলোড়ন করা দুর্নীতির কারণ হিসেবে নয়া যুক্তি কাঠগড়ায় রাখলেন সৌগত রায়। তিনি বলেন, 'অন্য চাকরি পায় না, তাই শিক্ষকতা। সেই জন্যেই প্রাথমিকের চাকরিতে এত দুর্নীতি'। তবে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরাও।  


বিরোধী তোপ দেগে বলেছে, 'আর্থিক দুর্নীতি তো তৃণমূল সরকারের আমলেই হয়েছে। রাজ্য়ে কর্মসংস্থান না থাকাতেই তো বাড়ছে বেকারত্ব।'শিক্ষায় নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে বছরখানেক ধরেই রাজ্যে তোলপাড় চলছে। গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য, বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। প্রশ্ন উঠেছে,প্রশাসনের নাকের ডগায়, এতবড় দুর্নীতি হল কী করে? কেন সরকারের শীর্ষমহল দুর্নীতি কোনও আঁচই পেল না? এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষায় দুর্নীতির কারণ নিয়ে আজব সাফাই শোনা গেল তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের গলায়। (Sougata Roy) 


তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, 'এই স্কুল, কোনওরকম এসে ক্লাসটা করেই ট্রেন ধরে বাড়ি। বিরাটি স্টেশনে দেখা যাবে শিক্ষকদের মেলা। শিক্ষাকে আর কেউ ভিশন হিসেবে নেয় না। জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নেয় না। প্রফেশন হিসেবে নেয়। অন্য চাকরি পায় না, তাই শিক্ষকতা কর, যে কোনও মূল্যে। সেই জন্যেই প্রাথমিক চাকরি পাওয়ার জন্যে এত দুর্নীতি হয়। যে টাকাপয়সা দিয়ে একবার ঢুকে পড়তে পারল, সারা জীবনের জন্য মাইনে বেশি,কম কাজ। .. তাই দুর্নীতি হয়।' 


প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পর, তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) দুটি ফ্ল্যাট থেকে মেলা কোটি কোটি টাকা বঙ্গবাসীর চক্ষু চড়কগাছ করে দিয়েছিল। এই মামলায় ধৃত হুগলির দুই তৃণমূল নেতার ভূমিকা ও তাঁদের প্রতিপত্তিও সামনে এসেছে। আর এখানেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন,যে আর্থিক দুর্নীতির কথা সৌগত রায় বলছেন,সেই আর্থিক দুর্নীতি তো তৃণমূল সরকারের আমলেই হয়েছে?গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়করা, তাহলে সেই দুর্নীতির দায় কার? বিরোধীদের আরও প্রশ্ন, সৌগত রায় যে চাকরি না পাওয়ার কথা বলছেন, সেটাও কি রাজ্যের বেকারত্বকেই ইঙ্গিত করে না? 


আরও পড়ুন, শহরে জমা জলের ইস্যুতে সরল ক্ষোভ, নিকাশি বিভাগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ফিরহাদ


প্রাথমিক শিক্ষক থেকে শুরু করে, SLST-র নবম-দ্বাদশ, নিয়োগের ক্ষেত্রে ভুরি ভুরি বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সামনে এসেছে একাধিক দুর্নীতি। অভিযোগ, কেউ ফেল করেও চাকরি পেয়েছেন। কারও আবার OMR শিটের নম্বর শূন্য হলেও, কমিশনের নথিতে তাঁরই নম্বর ৫০ পার করেছে। আর এদিকে, নিয়োগের দাবিতে লাগাতার রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মেধাতালিকায় নাম থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চালাচ্ছে CBI, ED-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা। আদালত থেকে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থী, সকলেই তাকিয়ে সেই তদন্তের দিকে। কবে মাথারা ধরা পড়বে, কবে নিয়োগ পাবেন যোগ্যপ্রার্থীরা, এসব প্রশ্নের মাঝেই এবার দুর্নীতির কারণ হিসেবে সৌগত রায়ের মন্তব্য নিয়ে শুরু হল তরজা।