কলকাতা: ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে বড়সড় রদবদল (BCCI)। BCCI-এর কোনও পদই পাচ্ছেন না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। যদিও BCCI সচিব পদে আগের মতোই বহাল থাকছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জয় শাহ (Jay Shah)। শুধু তাই নয়, ভারতের তরফে প্রতিনিধি স্বরূপ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসাবেও (ICC)  জয়কে আগামী দিনে দেখা যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তাতেই প্রশ্ন উঠছে,  বিজেপি-তে যোগ দিলেন না বলেই কি BCCI-এর প্রেসিডেন্ট পদ হারালেন সৌরভ? এর নেপথ্যে কি কাজ করছে রাজনীতি? প্রশ্ন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মহলেরও।


BCCI প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সৌরভকে সরানোর পিছনে রাজনীতি!


বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সৌরভের বাদ পড়ার খবর সামনে আসতেই এ নিয়ে এবিপি আনন্দে মুখ খোলেন তৃণমূল (TMC) সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় BCCI-এর কোনও পদ পাচ্ছেন না বা প্রেসিডেন্ট থাকছেন না, এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখের বিষয়। বাঙালির আইকন সৌরভ। ওঁকে ওরা খুব চাপ দিচ্ছিল বিজেপি-তে যোগ দিতে। বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলেন অমিত শাহ। বোধহয় বিজেপি-তে যোগদান না করাতেই সৌরভকে কোনও পদ দেওয়া হল না। বাঙালির এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত।’’


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি-র নেতা-নেত্রীরা চান সকলে তাঁদের বশবর্তী হয়ে থাকবেন। সৌরভরা খেলার মাঠে দায়িত্বে থাকবেন, ক্রীড়া প্রশাসনের দায়িত্ব নেবেন, সেটাই হওয়া উচিত। ফুটবলের ক্ষেত্রে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই মনোভাবই জানিয়েছে কোর্ট। খেলায়াড়রা পদ পাবেন না, শুধু রাজনীতিকদের মাতব্বরি চলবে, এটা হতে পারে না। দেখা যাক। হয়ত রাজনীতির খেলাতেই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তেমনই আন্দাজ মিলছে।’’


কিন্তু সৌরভের BCCI পদ না পাওয়াকে ঘিরে অহেতুক বিতর্ক হচ্ছে বলে দাবি রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘কাউকে কোনও পদ পাইয়ে দিয়ে দলে শামিল করার রাজনীতি কখনও বিজেপি করেনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তারকা এত জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাঁর। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওঁর কৃতিত্ব প্রশ্নাতীত। তাঁকে এই বিতর্কে টেনে আনায় আমার মনে হয় সমগ্র বাংলা এবং ক্রিকেট সমাজকে অপমান করা হচ্ছে। এই বিতর্ক দুর্ভাগ্যজনক, একেবারেই কাম্য নয়।’’


আরও পড়ুন: BCCI President: বিসিসিআই সভাপতির পদ হারাচ্ছেন সৌরভ, নতুন সভাপতি হচ্ছেন রজার বিনি?


উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে BCCI-এর প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন সৌরভ। অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ হন বোর্ড সচিব। তার পর থেকেই বিজেপি-র সঙ্গে সৌরভের সমীকরণ নিয়ে নানা তত্ত্ব সামনে আসতে থাকে, যা তুঙ্গে ওঠে ২০২১-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে। বিজেপি-র হয়ে প্রচারে এসে সৌরভের বেহালার বাড়িতে নৈশভোজ সারতে হাজির হন খোদ শাহ। হাসপাতালে যখন ভর্তি সৌরভ, সেখানেও বার বার ফোন করে খবর নেন শাহ। সৌরভ রাজনীতিতে আসবেন কিনা প্রশ্ন করলে, স্ত্রী ডোনা জানান, রাজনীতিতে এলেও খেলার মাঠের মতোই ভাল ফল করবেন স্বামী। তাতেই জল্পনা আরও জোর পায়। এমনকি বিজেপি-র তরফে সৌরভকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হতে পারে বলেও জোর গুঞ্জন ওঠে।


কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রচার ঘিরে যত হইহই ছিল, ভোটবাক্সে ততটা প্রভাব পড়েনি। তাতেই সৌরভের বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার খবরও ধীরে ধীরে থিতিয়ে যায়। বরং সম্প্রতি দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্তিতে রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক পাশেই দেখা যায় সৌরভকে। সেখানে পরস্পরের প্রশংসাও করেন তাঁরা। আর তার পরই BCCI প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানো হল সৌরভকে। অথচ নিজের পদে রয়ে গেলেন অমিত-পুত্র। ICC-তেও সৌরভের জায়গায় তাঁকে দেখা যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তাতেই এই রদবদলের পিছনে রাজনৈতিক যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সৌরভ বিজেপি-তে না যাওয়াতেই তাঁকে পদ খোয়াতে হল, এমন জল্পনাও উঠে আসছে। 


তবে সৌরভকে সরানোর পিছনে আরও যে তত্ত্ব উঠে আসছে, তা হল — BCCI সূত্রে জানা যাচ্ছে, বোর্ড মহলে পূর্বাভাস ছিলই যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে চমকপ্রদ ভাবে রজার বিনির নাম উঠে এসেছে। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছিল যে সৌরভকে আইসিসি-তে পাঠাতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট। সে  ক্ষেত্রে ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে আইসিসি চেয়ারম্যামনের পদে লড়াই করবেন তিনি। এমনকি সৌরভ নিজেও ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন যে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে আইসিসি-তে যেই যান না কেন, তাঁর জয় কার্যত নিশ্চিত। তবে টি-২০ ক্রিকেটে যেমন স্লগ ওভারে রং পাল্টে যায় ম্যাচের, বোর্ডের রাজনীতিতেও তেমনই চমকপ্রদ রদবদল ঘটে গেল। 


সৌরভ পদ না পেলেও, আগামী দিনে আরও পোক্ত জায়গায় অমিত-পুত্র!


বোর্ড সূত্রে খবর, আইসিসি চেয়ারম্যান পদের জন্য ক্রিকেট বোর্ড থেকে এ বার কাউকে না পাঠানোও হতে পারে। আইসিসি-র বর্তমান চেয়ারম্যান নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি গ্রেগ বার্কলে। ২০২০ সালে দায়িত্বে এসেছিলেন তিনি। তাঁর প্রথম মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে এ বছর। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, ২০২৫ পর্যন্ত বোর্ড সচিব হিসেবেই থেকে যেত পারেন জয় শাহ। তত দিন গ্রেগকে সমর্থন জানিয়ে যেতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তার পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে আইসিসি-র চেয়ারম্যান হতে পারেন জয় শাহ। তবে পুরো অঙ্কটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে সমীকরণের উপর, যা বদলে যেতে পারে যে কোনও মুহূর্তে।