ক্যানিং : দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে তৃণমূলের বুথ সভাপতিকে খুনের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত রশিদ জমাদারের এফআইআরে নাম ছিল। তৃণমূল বুথ সভাপতি নানু ওরফে নান্টু গাজিকে খুনের পরেই গা ঢাকা দেয় ওই দুষ্কৃতী। গতকাল রাতে বাড়ি ফিরতেই তাকে গ্রেফতার করে ক্যানিং থানার পুলিশ। শ্বশুর জুলফিকর গাজিকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় মূল সাক্ষী ছিলেন তৃণমূলের বুথ সভাপতি নানু ওরফে নান্টু গাজি। তার জেরেই খুন কি না, খতিয়ে দেখছে ক্যানিং থানার পুলিশ। 


পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকে গত ৩৮ দিনে বাংলায় ৫০-এরও বেশি মানুষের মৃত্য়ু হয়েছে। সন্ত্রাসের আতঙ্ককে ভুলতে দিচ্ছে না ! এইরকম ভয়াল এক পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্য়ানিংয়ে তৃণমূল নেতাকে খুনের অভিযোগ উঠল নৌশাদ সিদ্দিকির দল ISF-এর বিরুদ্ধে। নিহত নানু ওরফে নান্টু গাজি ক্য়ানিংয়ের ২৪২ নম্বর বুথে তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।


স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার ক্যানিংয়ের ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের রেদোখালি গাজিপাড়ায় বিজয়োৎসব পালন করেন তৃণমূল কর্মীরা। নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারের অভিযোগ, এরপর রাত ১টা নাগাদ নানুকে ফোন করে বাড়ি থেকে বেরোতে বলা হয়। পরিবার সূত্রের দাবি, বাড়ি থেকে বেরোতেই নানুকে ঘিরে ধরে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে দুষ্কৃতীরা ! চলতে থাকে বোমাবাজি। কিছুক্ষণ পরে মারাত্মক জখম অবস্থায় নানু গাজিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় গ্রামবাসী। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। 


ঘটনায় ISF-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও, তা অস্বীকার করেন দলীয় বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি। তিনি বলেন, 'প্রতিটা মৃত্য়ুই বেদনাদায়ক। আরেকটা ঘটনা আমার কাছে এসেছিল। বাসন্তীতে ক্য়ানিংয়ের দিকে এধরনের একটা ঘটনা ঘটেছে। সেক্ষেত্রেও আমাদের নামে দোষ আসছে। ব্য়াপারটা হচ্ছে, আমরা বিরোধী, আমাদের দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। প্রত্য়েকটা মৃত্য়ু আমাকে পীড়া দেয়। কারণ সে যে দলেরই হোক না কেন, আমি মানুষ হিসেবে তাকে দেখতে চাই। তাও বলব, তদন্ত হোক। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না।'


নিহত তৃণমূল নেতার পরিবার এই ঘটনার নেপথ্যে আইএসএফ-কে দায়ী করলেও, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক কিন্তু, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্রই মানতে নারাজ ! কিন্তু, কেন এই মতবিরোধ ? সূত্রের দাবি, রাস্তা নিয়ে বিবাদের জেরে কয়েক বছর আগে পিটিয়ে মারা হয় তৃণমূল নেতা নানু গাজির শ্বশুর জুলফিকর গাজিকে। মলার মূল সাক্ষী ছিলেন নান্টু।


ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন, 'যারা কুপিয়েছে তাদের এলাকাবাসী চিনতে পেরেছে। শ্বশুরের সাক্ষী চলছিল। চক্রান্ত করছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ক্য়ানিং শান্তিপূর্ণ এলাকা। যারা খুন করেছে, তারা কোনও দলের হয় না। আমার মনে হয়, এতে কোনও পলিটিক্য়াল যোগ নেই। যারা ওঁর শ্বশুরকে ফোন করেছে, তারাই খুন করেছে।'


সঠিক কী কারণে তৃণমূল নেতাকে খুন করা হল ? এর নেপথ্যে রাজনৈতিক যোগসূত্র আছে ? না কি পুরোটাই ব্যক্তিগত আক্রোশের জের? সবদিক খতিয়ে দেখছে ক্যানিং থানার পুলিশ।  চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।