হিন্দোল দে, সৌভিক মজুমদার ও সমীরণ পাল, ভাঙড় : ISF-এর ওপর গুলি চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা। এক যুবকের ভাইরাল ভিডিও ঘিরে উত্তপ্ত ভাঙড়ের রাজনীতি ! ইতিমধ্যে সেই ভাইরাল ভিডিও হাইকোর্টে দেখিয়েছেন ISF-এর আইনজীবী। যদিও সওকত মোল্লার দাবি, জোর করে ওই যুবককে হামলার কথা বলিয়ে নেওয়া হয়েছে ! প্রথমে মুখে সওকত মোল্লার নাম বললেও, পরে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে অবস্থান বদল ভাইরাল হওয়া যুবকেরও। 


মনোনয়ন ঘিরে বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস দেখেছে রাজ্যবাসী ! শুধু ভাঙড়েই একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন ! এই পরিস্থিতিতে একটি ভাইরাল ভিডিও ঘিরে ফের সরগরম হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি !


বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের সন্ত্রাসের নেপথ্যে দায়ী কারা ? এটা কি দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ ? না, পরিকল্পিত সন্ত্রাস ? এই প্রশ্নগুলি ঘিরে যখন ক্রমশ তরজার পারদ ঊর্ধমুখী, তখন এই ভাইরাল ভিডিওয় চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন ভাঙড় দু'নম্বর ব্লকের মধ্য হাটগাছির বাসিন্দা গোবিন্দ নস্কর। তাঁর দাবি, ISF-এর ওপর গুলি চালাতে তাঁকে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা ! ভিডিওয় উভয়পক্ষের যে বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, তার কথোপকথন অনেকটা এরকম...


ISF কর্মী: তুমি কার লোক?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: আমি সওকত মোল্লার লোক। আমাকে ভাড়া করে এনেছে ৫ হাজার টাকা দেবে বলে। আমার কাছে মেশিনও (আগ্নেয়াস্ত্র) রয়েছে, দানাও (গুলি) রয়েছে। আমি ওপেন গুলিও করেছি। ISF-কে গুলি করতে বলেছে ও আমাকে। গুলি করতে গিয়ে আমার দানা শেষ হয়ে গেছে। আমি ছুট মারতে গিয়ে আমি ধরা পড়ে গেছি।


ISF কর্মী: কতজন এসেছিলে তোমরা?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: আমরা এসেছি প্রায় ৩০ জন মতো।


ISF কর্মী: কীসে করে এসেছিলে?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: ৪০৭। আমার বাড়ি হাটগাছা।


ISF কর্মী: তোমাদের কাছে কত বোমা ছিল?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: কার ব্যাগে কত ছিল, ৭-৮টা বোমার ব্য়াগ ছিল। আমার কাছে আছে। মেশিন দিয়েছে। আর ১০-১২টা দানা দিয়েছিল।


ISF কর্মী: ফায়ার করেছ?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: হ্যাঁ, সব ফায়ার করে দিয়েছি।


ISF কর্মী: লেগেছে কটা?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: লাগেনি কারও।


ISF কর্মী: কারও লাগেনি?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: না, কারও লাগেনি। ভিড়ের মধ্যে লেগেছে কিনা অতটা বুঝতে পারিনি।


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা : ISF-কে গুলি করতে বলেছিল আমাকে। লাস্টে গুলি শেষ হয়ে গেল মেশিন ছেড়ে...
একটা মেশিন ফেলে ছুট মারতে গিয়ে...


ISF কর্মী : মেশিন কোথায় ছিল?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: মেশিনটা ওই তোমার একটা ধান জমির মতো, জমির মধ্যে ফেলে দিই।


ISF কর্মী: তুমি বোমা মেরেছ কটা?


গোবিন্দ নস্কর, বাসিন্দা, হাটগাছা: বোমা আমি একটাও ফেলিনি। আমি মেশিন নিয়েই ছিলাম। আর সব ছেলেপুলে তাঁরা সব ফেলেছে।

ভাঙড়ের অশান্তির ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ISF। এদিন সেই মামলার শুনানি চলাকালীন এই ভাইরাল ভিডিওর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন ISF-এর আইনজীবী। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে এই ভিডিওটি চালিয়ে দেখানো হয়। 
ISF-এর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, এই যে তৃণমূলের গুন্ডারা এসেছিল, তাদের মধ্যে একজনের গুলি চালাতে চালাতে শেষ হয়ে যায়। যেহেতু বেশ কয়েকজন ছিল, তাই তারা তাকে ধরে ফেলতে সক্ষম হয়। সে স্টেটমেন্ট করেছে, তাকে নাকি এমএলএ সওকত মোল্লা পাঠিয়েছেন। সে এমএলএ সওকত মোল্লার লোক, তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে।


যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল বিধায়ক ও ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক সওকত মোল্লা বলেন, 'আমি ওকে চিনি না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। ওকে মেশিন ঠেকিয়ে দিয়ে বলেছে তোকে এই কথোগুলো বলতে হবে। আমিও আদালতের কাছে আবেদন করব, যদি মিথ্যা করে কেউ এই ধরনের অভিযোগ আনে, যেহেতু আমিও একজন জনপ্রতিনিধি, তার বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হোক।' 


কিন্তু ভাইরাল ভিডিওয় স্পষ্টভাবে তৃণমূল বিধায়কের নাম নিলেও, পরে হঠাৎই অবস্থান বদলে নৌশাদ সিদ্দিকির দলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে শুরু করেন গোবিন্দ ! তিনি বলেন, 'আইএসএফ কর্মীরা আমাকে গ্রামের মাঝখানে নিয়ে গেল, ওখানে দড়ি দিয়ে বাঁধল। আমি জীবন বাঁচানোর জন্য বলি। ওরা শিখিয়ে দিয়েছে আমাকে।'

গোবিন্দ আগে ঠিক বলছিলেন, না, এখন ? মন পরিবর্তনের নেপথ্য়ে কী খেলা ? উত্তর নেই।