জয়দীপ হালদার, ডায়মন্ড হারবার : আবারও পরিবারের কাছে হ্যাম রেডিও ফিরিয়ে দিল পরিজনকে। ১২ বছর আগে আত্মীয়র বাড়িতে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন নদিয়ার চাকদার বল্লভপুরের বাসিন্দা জ্যোতি সরকার। তারপর আর বাড়ি ফিরে আসেননি। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বছর পঞ্চান্নর ওই মহিলা। ১২ বছর পর ডায়মন্ড হারবার থেকে হ্যাম রেডিওর সৌজন্যে পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন তিনি।


জানা যাচ্ছে, স্বামীর অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারেননি জ্যোতি সরকার নামে ওই মহিলা। স্বামী মনোরঞ্জন সরকার যখন মারা যান, তখন তাঁর ছেলে মিঠুনের বয়স মাত্র ৮ বছর। স্থানীয় সূত্রে খবর, মায়ের মতোই বাবার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি ছেলে মিঠুনও। বাবা চলে যাওয়ার পর থেকেই অবসাদে ভুগতে শুরু করেন জ্যোতি দেবী। অবসাদে ভুগতে ভুগতে ক্রমশ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। ১২ বছর আগে একদিন আত্মীয়র বাড়িতে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন জ্যোতি দেবী। সেই বেরনোর পর থেকে আর তাঁর কোনও খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। সমস্ত আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি তাঁদের কারও বাড়িতেই যাননি। অনেক চেষ্টা করেও তাঁর খোঁজ মেলেনি। 


খবর পাওয়া যায় যে, গত ১৩ অগাস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ওই মহিলা। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে তখন উদ্ধার করে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে পরদিনই ডায়মন্ড হারবার মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। হাসপাতালের সহকারী সুপার সুপ্রিম সাহা ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে তিনি তাঁর স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছেন এবং পথ ভুলে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করেছেন। বাড়ির ঠিকানাও তাঁর মনে নেই বলে জানিয়েছেন ওই মহিলা।


এরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হ্যাম রেডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করে। হ্যাম রেডিওর সদস্যরা খোঁজ করে জ্যোতি সরকার নামে ওই মহিলার পরিচয় জানতে পারেন এবং তাঁর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরা মহিলার ছেলে মিঠুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নিখোঁজ মায়ের সন্ধান পান তাঁর ছেলে মিঠুন। পেশায় গাড়ি চালক মিঠুন আর দেরি না করে মাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বৃহস্পতিবারই ডায়মন্ড হারবারে চলে আসেন। এত বছর বাদে ছেলেকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই মহিলাও।