শান্তনু নস্কর, গোসাবা: সুন্দরবনের উন্নয়নই ছিল তুষার কাঞ্জিলালের একমাত্র স্বপ্ন। তাই সুন্দরবনকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য সর্বদা প্রয়াস চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।
তুষারবাবুর অনুপ্রেরনায় তার স্ত্রী বীণা কাঞ্জিলাল ১৯৭৬ সালে মহিলাদের আত্মনির্ভরতা, লিঙ্গ বৈষম্যতা, পণপ্রথা, বধূ নির্যাতন, নিরক্ষরতা ও স্বাস্থ্যহীনতার মত অবিচার দূরীকরণের লক্ষ্যে মহিলা সমিতি গঠন করেছিলেন এই রাঙ্গাবেলিয়ায়।
মহিলাদের বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ শিখিয়ে তাঁদের স্বনির্ভর করে তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে তিনি সফলও হয়েছিলেন।
বর্তমানে বহু মহিলা হস্তশিল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়েছেন। তবে গত বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা সংক্রমণের জেরে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন এই তাঁরা। সুন্দরবনে পর্যটন বন্ধ থাকার কারণে তাঁদের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকেছে।
রাঙাবেলিয়া টেগোর সোসাইটির মহিলা কর্মীরা মূলত নিজেদের হাতে বাটিকের বিভিন্ন সামগ্রী যেমন তৈরি করেন। তেমনি, তাঁতে শাড়ি, গামছা সহ অন্যান্য বস্ত্রও তৈরি করেন। এছাড়া পাট দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ঘর সাজানোর সামগ্রীও নির্মাণ করে থাকেন তাঁরা।
সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকরা এই মহিলা সমিতির স্টল থেকে তাঁদের হস্তশিল্পের জিনিসপত্র কেনেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই টানা লকডাউনে পর্যটন বন্ধ সুন্দরবনে।
মাঝে দু-একমাস পর্যটন চালু হলেও ফের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে বন্ধ পর্যটন। এই পরিস্থিতিতে মহিলা শিল্পীদের হাতে তৈরি জিনিসপত্রের বিক্রি প্রায় বন্ধ।
ফলে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন প্রায় ৫০ জন মহিলা শিল্পী। সংস্থার এমনই দুই মহিলা শিল্পী সুজাতা কর ও অপর্ণা খাটুয়ারা বলেন, “আমরা সুন্দরবনের মানুষ। প্রতিবছর একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এমনিতেই দিশেহারা। তার উপর পর্যটন বন্ধ থাকায় আমাদের উৎপাদিত জিনিসপত্রের বিক্রি প্রায় বন্ধ। আমরা ৫০ জন মহিলা এখানে কাজ করি। সংসার চালানোর জন্য কাজ করে স্বামীদের হাতে কিছু পয়সা তুলে দিতাম কিন্তু এখন আর দিতে পারছিনা খুবই সমস্যায় পড়েছি আমরা।”
তাঁদের দুরাবস্থার কথা শুনে ইতিমধ্যেই গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র এবং ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক আজহার জিয়া গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। কিভাবে তাঁদের তৈরি উৎপাদন সামগ্রীর বিক্রি বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কথা বলেন তাঁরা।
এই মহিলাদের তৈরি শিল্পকর্ম যাতে ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি করা যায় সেই বিষয়টি প্রশাসনিক ভাবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র। তিনি আরও জানান, ওনাদের তৈরি সামগ্রী বিক্রির জন্য গোসাবার কর্মতীর্থে একটি স্টলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।