গৌতম মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: পারিবারিক অশান্তিতে প্রাণ গেল একরত্তির। পারিবারিক বিবাদের জেরে সাত বছরের ছেলেকে খুনের অভিযোগ উঠল বাবার বিরুদ্ধেই। শুধু তাই নয়, সন্তানকে খুন করে বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রীকেও অভিযুক্ত ফোন করেন বলে অভিযোগ। এসে সন্তানকে কবর দিয়ে যেতে ডাকেন বলে দাবি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির এই ঘটনায় অভিযুক্ত বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 


স্নেহের সন্তানের মৃত্যুতে কান্না থামছে না মায়ের। আর মা বলে ডাকবে না যে কোলের সন্তান! পারিবারিক বিবাদে নিজের সাত বছরের ছেলেকে খুনের অভিযোগ উঠল বাবারই বিরুদ্ধে। সেখানেই শেষ নয়, ছেলেকে খুনের পর অভিযুক্ত বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রীকে ফোন করে খুনের কথা নিজেই জানান বলেও দাবি সামনে এসেছে। 


পরিবার সূত্রে খবর, সন্তানকে খুন করে বিবাহবিচ্ছিন্না ফোন করেন ওই ব্যক্তি। বলেন, "একেবারে শেষ করে দিয়েছি। এসে কবর দিয়ে যাও।" এই ঘটনাকে ঘিরে সরগরম দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্থির নাজরা এলাকা।


নিহত শিশুর আত্মীয়, কোহিনুর বিব বলেন, "মাস কয়েক আগে তালাক হয়ে যায়। তার পর আমার কাছেই থাকত। রফিক ফোন করে বলে, তোর ছেলেকে খুন করেছি। এসে কবর দিয়ে যা।" ওই শিশুর মা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার প্রেক্ষিতে পার্ক সার্কাস স্টেশন থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 


ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও মিতুন দে বলেন, "অভিযোগ পেয়েছি। এক শিশুর দেহ উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বাবাকে। প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। পারিবারিক বিবাদে খুন করা হয়েছে বলে ঠাহর হচ্ছে।"


নিহত ওই শিশুর মায়ের তরফে, তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, আট বছর আগে উস্তির রফিক শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় রুকসার বিবির। এক ছেলে, এক মেয়ে হয় তাঁদের। রকসারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্বামী এবং  শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালাত।


রুকসারের এক আত্মীয়া জানিয়েছেন, ভাগ্নির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন রফিক। চার মাস আগে তাই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন রুকসার। ছেলে বাবার সঙ্গেই থাকছিল। মেয়েকে নিজের কাছে রেখেছিলেন রুকসার। 


পরিবার সূত্রে খবর, শনিবার রাতে রুকসারের শ্বশুরবাড়ির অদূরে, একটি পুকুর থেকে তাঁর সাত বছরের ছেলে রোহিতের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।  তাতে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন রুকসার। 



রুকসারের অভিযোগ, "বিয়ের পর থেকেই আমার উপর অত্যাচার চালাতেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। স্বামী মত্ত অবস্থায় নির্যাতন করত। মারধর করতেন শ্বশুরবাড়ির অন্যরাও। চরম সীমায় পৌঁছয়। আমি চলে আসি। ছেলেকেও আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা দেয়নি। শাশুড়ি আটকে দেয়। মেরে ফেলবে, ভাবতে পারিনি।"


রুকসারের অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথমে মৃত শিশুর ঠাকুমা, পিসি ও কাকাকে আটক করে পুলিশ। পরে বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। শিশুটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ধৃত রফিকের বাড়িতে তালা। কারও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।