আরামবাগ ও কলকাতা: ব্যারেজের ছাড়া জলে, জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি। যা নিয়ে ফের 'ম্যান মেড বন্যা'-র অভিযোগে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঠগড়ায় তোলেন ডিভিসি-কে। 


বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বন্যা আরামবাগে যান মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার পাশাপাশি, কথা বলেন দুর্গতদের সঙ্গে। অভিযোগ করেন, মধ্যরাতে যখন মানুষ ঘুমোচ্ছে, তখন জল ছাড়া হয়। 


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৩০ তারিখ যেদিন ভোট ছিল সেদিন, হঠাৎ না বলে ১২টার সময় ৪৯ হাজার কিউসেক পাঞ্চেত আর মাইথন থেকে ডিসচার্জ করল। একটার সময় আবার ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ল কারও সঙ্গে কথা না বলে। আবার সাড়ে আটটার সময় এক লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক ছাড়ে। 


তিনি বলেন, ৩০ তারিখ জল ছাড়ে প্রায় ৩ লক্ষ। মধ্যরাতে যখন মানুষ ঘুমোচ্ছে, তখন জল ছাড়ে। এটা ম্যান ম্যাড ফ্লাড। আবার ১ তারিখে সকাল সওয়া ৮টায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। আবার ১ লক্ষ ২৫ হাজার জল ছেড়েছে। 


পাল্টা, রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। এদিন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে রাজ্য বিজেপির বর্তমান ও প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষ একযোগে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারকেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন। 


শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এর জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সরকার। প্রি-মনসুন যে কাজ হয়, এবারে সেই কাজ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী করতে দেননি। কারণ, তাঁকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য প্রতিমাসে খরচ করতে হবে। রাজ্যর যে বেহাল অবস্থা বাঁধগুলির সে অবস্থা, অতিবর্ষণ হয়েছে দুর্বল বাঁধ ভেঙেছে, এর সঙ্গে ডিভিসর কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর কটাক্ষ, নিজের কুর্শি বাঁচাতে ৫০ লক্ষ মানুষকে বিপদে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। 


ছাড়া জলের কারণে বন্যা এই অভিযোগ তুলে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ডিভিসি-র কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে হতে পারে। কারণ বছরে যদি চার বার করে জল আসে। সব টাকা জলে চলে যাচ্ছে। একবার সারছে, তারপর ভাঙছে। চাষ করছে ভেসে যাচ্ছে এটা কেন হবে? ঝাড়খণ্ড সরকারকে বলব আমাদের সঙ্গে একটা প্ল্যান করুক। আর কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যই মাস্টার প্ল্যান করুক। আর টাকা দিক। কেন্দ্রীয় সরকার আর ডিভিসি বারবার জল ছাড়বে আর আমাদের টাকা আয় করবে। মানুষকে জলে ডোবাবে তা কেন হবে?


মুখ্যমন্ত্রীর আরামবাগ সফর নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, জলে দাঁড়িয়ে ফোটোশ্যুট করতে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারকে জানিয়েই জল ছেড়েছে ডিভিসি। এখন মমতা বলছেন কিছুই জানতেন না। 


এদিন ডিভিসি-র বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, জল যখন অল্প থাকবে তখন বলো আস্তে আস্তে ছাড়ছি, তুমি যখন ফুল হয়ে গেলে, আমি ফুল হয়ে গেলাম তখন আমার মুখের উপর জল ছেড়ে দিচ্ছ। সমাধি করে দিচ্ছে। এটা খুব বড় অপরাধ। স্ট্রংলি প্রটেস্ট করেছি।


পাল্টা কটাক্ষ বিজেপি প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেন, বৃষ্টি হলে তো জল ছাড়বে। ওনার লোক তো ডিভিসি-তে আছে, ওনারা তো জানেন কি হতে পারে। পরিস্থিতি কি আছে, সতর্ক করেছেন। কিন্তু, তিনি একই গল্প করে যাচ্ছেন, ওনার হাতে ক্ষমতা আছে ১০ বছর। ম্যান মেড যাতে না হয়, তার জন্য কী করেছেন? বৃষ্টি তো হবেই, জল তো আসবেই নদী দিয়ে, কেউ তো জল কেটে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে না। বৃষ্টি আর জল বৃদ্ধি হলে কি সমাধান হবে, সেই বিষয়ে কিচ্ছু করেননি মুখ্যমন্ত্রী।


আরও পড়ুন: 'ক্ষোভ কিন্তু বাড়ছে', আরামবাগে বন্যাদুর্গত জায়গায় সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী


আরও পড়ুন: পুজোর আগে ভাসছে রাজ্যের একাধিক জেলা, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ আকাশপথে পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী