উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, আবির দত্ত, কলকাতা : আইন কলেজের ভিতরে গণধর্ষণের অভিযোগ। ভয়ঙ্কর এই অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য। অভিযুক্ত কারা? সেই কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র ও কলেজের বর্তমান আইনের পড়ুয়ারা। মারাত্মক এই অভিযোগ ওঠার পর চারিদিকে  প্রতিবাদের ঝড়। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে কেউটে। মনোজিতের প্রভাবশালী যোগ, বেপরোয়া হাবভাব, একের পর এক অপরাধের অভিযোগ। সব জেনেশুনেও কলেজ কর্তৃপক্ষের নীরব থাকা। ভয়ঙ্কর সব অভিযোগ সামনে আসছে প্রতিদিন। মহিলাদের সম্মানহানি করার একের পর এক অভিযোগ।  রোজই প্রকাশ্যে আসছে, আইন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, প্রাক্তন টিএমসিপি নেতা, অধুনা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ মনোজিতের অন্যায্য কাজের হাড়হিম করা ভিডিও।  

মনোজিতের বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক অপরাধমূলক কাজকর্ম নিয়ে একে একে মুখ খুলছেন কলেজের ছাত্র-ছাত্রী থেকে নিরাপত্তা রক্ষী, শিক্ষক-শিক্ষিকা অনেকেই ।  মনোজিতের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ তুলেছেন, নির্যাতিতার সহপাঠী এবং কসবার আইন কলেজেরই প্রথম বর্ষের আরেক ছাত্রীও। আইন নিয়ে পড়াশোনা করবেন, এই স্বপ্ন নিয়ে, ২০২৪-এ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন সাউথ ক্য়ালকাটা ল কলেজে।  কিন্তু ঢোকার কয়েকদিনের মধ্য়েই, মনোজিতদের জন্য়ই কলেজের ভিতরের পরিবেশ তাঁর কাছে অসহ্য় হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। তাঁরও দাবি, 'মনোজিত বলেছিলেন, যে, তোমার মধ্যে তো অনেক ট্য়ালেন্ট আছে, তুমি ইউনিয়ন জয়েন করতে পরো। আমি বলেছিলাম, না, আমার এইসব বিষয়ে কোনও ইচ্ছা নেই। আমি পড়াশোনা করতে এসেছি, আমি পড়াশোনা করব, বাড়ি চলে যাব। তো, উনি, বললেন, ও... ঠিক আছে। দেখে নেব। কোনও কিছুতেই আমি ভাগও নিতাম না, আমি যেতামও না। একপ্রকার ক্লাস করতে হয়, ক্লাস হত, তাই যেতাম অ্যাটেনডেন্সের জন্য়। ব্যাস, বাড়ি চলে আসতাম।' ২০২৩ সালে এরকমই একটি কলেজ পিকনিকে গিয়ে মনোজিৎ মিশ্রর হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কলেজেকই আরেক ছাত্রী। 

আর এবার কলেজেরই আরেক ছাত্রীর অভিযোগ, কাউকে কোনও তোয়াক্কা করতেন না মনোজিৎ মিশ্র।  ক্লাস চলাকালীন, অধ্য়াপকদের সামনে থেকে যে কোনও কাউকে উঠিয়ে নিয়ে যেতেন। ছাত্রীর কথায়, 'ক্লাস চলাকালীন উনি (মনোজিৎ মিশ্র) আসতেন। ওঁর চ্য়ালা-চামুণ্ডারা কিছু লোকজন ছিলেন, তাঁরাও আসতেন। এসে এরকম শুধু হাতের ইশারা করতেন। টিচাররা ওখানেই দাঁড়িয়ে বলত, যাও, তুমি চলে যাও। তোমাকে ডাকছে, তুমি চলে যাও। ব্যাস। কেউ কোনও কথাও বলত না। কেউ কিছু বলতও না। কঠোর থেকে কঠোর টিচারও কিছু বলত না। এসে শুধু হাতের ইশারা করতেন, তাতেই মানুষজন চলে যেত। আজকে যে আমরা মনোজিৎ... এদেরকে বলছি, এদেরকে দোষ দিয়েও লাভ নেই।  আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষ সবকিছুই ওঁদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কী আর বলব! উনি হর্তা-কর্তা বিধাতা বলতে যাকে বোঝায়,  মানে, আপনি স্টুডেন্ট, আপনাকে ঢুকেই বলে দেওয়া হবে ভাই তুই রণে বনে জলে জঙ্গলে যেখানে বিপদে পড়বি, সেখানেই আমার দর্শন পাবি। '  যেখানে জীবন গড়ার পাঠ দেওয়া হয়, সেখানেই জীবন নিয়ে কার্যত আতঙ্কে থাকতে হত বলে অভিযোগ করছেন এই ছাত্রী।