কলকাতা: কসবাকাণ্ডের ১১ দিন পরে গতকাল খুলেছে সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজ। আজ থেকে পঠনপাঠন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কলেজ চত্বরের সেই চেনা ছবি উধাও। এখনও আতঙ্কে আইন পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। কলেজে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ক্য়াম্পাসেই ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে তৃণমূলকর্মী ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা মনোজিৎ মিশ্র এখন জেলে। কিন্তু কলেজে তার এতটাই দাপট ছিল যে এখনও মুখে মুখে ফিরছে মনোজিতের অত্যাচার-কুকীর্তির কথা। কলেজের পড়ুয়া ওয়াসিম আক্রম মল্লিক বলছেন, "ওরা যা করত ইউনিয়ন রুমে। কলেজে দাদাগিরি যা করত গ্রাউন্ড ফ্লোরটা। ওরা কেমন একটা হাবভাব দেখিয়ে ঘুরে বেড়াত। আমরা ভাবতাম হয়তো সিনিয়র হবে। প্রশ্রয় না থাকলে এত সাহস কোথা থেকে পায়? নিশ্চয় তো প্রশ্রয় বা পিছনে ওদের কেউ আছে।'' কসবাকাণ্ডের ১১ দিন পর সোমবার সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের দরজা খুলেছে। ক্যাম্পাসজুড়ে বসেছে সিসি ক্যামেরা। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। কলেজে ঢুকতে গেলে আই কার্ড দেখানো বাধ্যতামূলক। এত কড়াকড়ির পরও ভয় কাটেনি। মঙ্গলবার থেকে আইন কলেজে স্নাতোকোত্তরের পঠনপাঠন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু কোনও পড়ুয়াই এলেন না। প্রজেক্ট জমা দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদেরকেই কলেজে দেখা গেল। আরেক পডুয়ার কথায়, "বাড়িতে সবাই একটু টেনশনেই আছে। জিনিসটা তো যেটা হয়েছে ঠিক তো নাই একদম। (বাড়ির লোক) ভয় পাচ্ছে। বলছে যা একসাথে থাকতে, সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে। একা একা না যেতে। বাড়ি থেকে আসতে না করছিল। আসতে তো হয়েছে কারণ প্রজেক্ট জমা দিতে হবে।'' কসবার আইন কলেজে মনোজিতের প্রভাব কতটা ছিল তা পড়ুয়াদের কথা থেকেই স্পষ্ট। এক পড়ুয়ার অভিযোগ, "আমরা না চাইতেও আমরা বিভিন্ন সাহায্য চাইতে গেলে তখন ইউনিয়নের দ্বারস্থ হতেই হয়। কারণ যারা প্রিন্সিপাল বা ভাইস প্রিন্সিপাল, তাঁরা কিছু করেন না। ভাইস প্রিন্সিপাল এক তো জিবি প্রেসিডেন্টের কারণে অনেকটা প্রেসারে থাকতেন। ভাইস প্রিন্সিপাল ম্যাম সবটাই আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে যদি কিছু করতে হয় মনোজিতের সাহায্যটা তুমি নেবে। উনি সব বিষয়ে বলেন। যেমন প্রফেসরের একটা সমস্যা হয়েছিল মাঝে। ইকনমিক্সের প্রফেসরের। তখনও দাদাকেই বলতে বলেছিলেন। বলেছিলেন সবচেয়ে ভাল হয় তুমি মনোজিৎ দার সঙ্গে কথা বলো।''কলেজ ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের মতো জঘন্য অভিযোগ ওঠার পর অনেক অভিভাবকই সন্তানকে একা কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। পড়ুয়ার অভিভাবক কল্যাণী দাস বলছেন, "ঘটনা শুনে মানে একটু চিন্তিত তো আছি। মেয়েকে এতদূরে পাঠানো হয়। আজ যেরকম হচ্ছে (নিরাপত্তা) সেরকম যদি আগে থেকেই হত, তাহলে এরকম ঘটনাটা মনে হয় হত না।'' আরেক পড়ুয়ার অভিভাবক শুক্লা চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "জঘন্য ঘটনা। কারণ কী প্রত্যেকটা মায়েরই সন্তান তাদের কাছে সমান। কিন্তু এরকম অপরাধজনক ঘটনা আর যাতে না হয় তার জন্য পুলিশ প্রশানের দেখা উচিত। প্রত্যেক কলেজেরই কিন্তু এরকম একটা করে (মনোজিৎ) আছে।''