মুন্না আগরওয়াল, দক্ষিণ দিনাজপুর: রবিনসন স্ট্রিটকাণ্ডের ছায়া দক্ষিণ দিনাজপুরে (South Dinajpur)। মৃত দিদিমার দেহ আগলে বসবাস করছিলেন তাঁর নাতনি। তিন দিনের দিন বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর জানতে পারে স্থানীয়রা। এরপর পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর (South Dinajpur) কুমারগঞ্জ থানার ভোঁওড় গ্রামে। মৃত বৃদ্ধার নাম সন্ধ্যা রানী ঝাঁ। গতকাল মহিলার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট হাসপাতালে (Balurghat Hospital) পাঠায় কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। পাশাপাশি নাবালিকাকে আপাতত কুমারগঞ্জ খাবারের ব্যবস্থা করেছে। দেখভালের জন্য বাড়িতে সিভিক ভলেন্টিয়ার পোস্টিং করা হয়েছে। প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁকে হোমে পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে। এদিন শুক্রবার পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় ক্লাব সদস্যদের উদ্যোগে বালুরঘাটে মৃতদেহ সৎকার করা হচ্ছে।


ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল?


জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা রানী ঝাঁর স্বামী অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছেন। এক মেয়ে ও তাঁর স্বামীও অনেক দিন আগে মারা গেছেন। এক ছেলে থাকলেও তাঁর কোনও খোঁজ নেই। এদিকে সন্ধ্যা রানী দেবীর নাতনি রানী চৌধুরী মানসিক ভাবে অসুস্থ। তাঁকে নিয়েই কোনও রকমে বাস করতেন তিনি। বয়সের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সন্ধ্যা রানী। নাতনিকে নিয়েই থাকতেন। অভাব-অনটন থাকায় নাতনির চিকিৎসা করাতে পারেননি। মহিলাকে দেখতে না পাওয়ায়, স্থানীয়রা গতকাল বৃদ্ধার বাড়ি যান। তখনই নজরে আসে বৃদ্ধার দেহ ঘরে পড়ে রয়েছে। দেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আর তার পাশেই বসে আছে তাঁর নাতনি। স্মৃতিদেবীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। সবকিছু খতিয়ে দেখার পর পুলিশের প্রাথমিক অনুমান গত মঙ্গলবারই মারা যান তিনি। মারা যাওয়ায় তিন দিনে শরীরে পচন ধরেছিল। যার ফলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। এদিকে ওই বৃদ্ধার নাতনি মৃতদেহের সঙ্গেই দিন কাটায়। এমনকী দু'দিন ধরেই অভুক্ত অবস্থায় ছিল সে। বিষয়টি নজরে আসার পরে ওই মানসিকভাবে অসুস্থ নাবালিকাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন প্রতিবেশীরা। যদিও বর্তমানে পুলিশ তার দেখভাল করছে।


অভুক্ত নাতনিকে নিয়ে চিন্তা প্রতিবেশীদের


এদিকে প্রতিবেশীদের এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই মানসিক ভাবে অসুস্থ নাবালিকাকে নিয়ে। কারণ এতদিন পর্যন্ত সে তার দিদার সঙ্গে থাকত। বর্তমানে তার আর কেউ নেই। সে কি ভাবে থাকবে? কোথায় থাকবে? আপাতত ওই নাবালিকাকে প্রতিবেশী একজনের বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীরা পুরো বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের তরফে ওই নাবালিকাকে কোন হোমে থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়ত সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।


দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ ও কতদিন আগে মারা গেছেন তা জানা যাবে। মৃতার নাতনি কে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কুমারগঞ্জের ভিডিও মৃতের বাড়িতে গিয়ে নাতনির সাথে দেখা করেন। তিনি জানান, ঐ নাবালিকা মানসিক ভারসাম্যহীন হ‌ওয়ায়, হোমে নয়, আপাতত বালুরঘাট হাসপাতালের মানসিক বিভাগে ভর্তি করা হবে।