রুমা পাল, কলকাতা : ভোটের ফান্ড থেকে নয়ছয় করা হয়েছে টাকা। জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে পদত্যাগপত্র পাঠালেন বেহালা পশ্চিম মণ্ডলের তিন বিজেপি নেতা। নেপথ্যে তৃণমূলের উস্কানি দেখছে বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। 


দলের একাংশের বিরুদ্ধেই আর্থিক তছরুপের অভিযোগ তুলে, পদত্যাগপত্র পাঠালেন বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার একের পর এক নেতা। চলতি বছর লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা ১৮ থেকে কমে হয়েছে ১২। তার এক মাসের মধ্যেই, চার কেন্দ্রের বিধানসভা উপনির্বাচনেও গেরুয়া শিবিরের ভাঁড়ার শূন্য। উল্টে হাতছাড়া হয়েছে ২১-এ জেতা তিনটি কেন্দ্র। তারপর থেকেই দলের অন্দরে ক্ষোভ-অসন্তোষের চোরা স্রোত বইছে। সম্প্রতি রাজ্য় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন তথাগত রায়, রাহুল সিন্হাদের মতো বিজেপি নেতারা।


বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় বলেছেন, 'তৃণমূল বিজেপির বিভিন্ন কার্যকর্তাকে ঘুষ খাইয়েছে। সেটার ওপর নজর রাখা উচিত ছিল।'


অপর এক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেছেন, 'মোদিজি যে সমস্ত কাজ করেছেন, সেগুলিকে আমরা ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পারিনি। তৃণমূলের ব্যর্থতাগুলোকে ভেঙে ভেঙে জনসমক্ষে নিয়ে যেতে পারলে আর একটু বেশি লাভ হতে পারত।'

এবার জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ভোটের ফান্ড নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বিজেপি যুব মোর্চার বেহালা পশ্চিম ৫নং মণ্ডলের সভাপতি দিব্যেন্দু সামন্ত, সহ-সভাপতি শুভঙ্কর মাইতি ও সভানেত্রী আরতি ভাট। অভিযোগ, ভোটের সময় বুথ এলাকায় প্রচার ও এজেন্টদের জলখাবারের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা নয়ছয় করেছে দলেরই নেতৃত্বের একাংশ।


বেহালা পশ্চিম মণ্ডল ৫-এর বিজেপি যুব মোর্চার পদত্যাগী মণ্ডল সহ-সভাপতি শুভঙ্কর মাইতি বলেন, 'পার্টিতে থেকে কাজ করতে পারা যাচ্ছে না এবং কিছু ব্যক্তি আছে যাঁরা দল ভালবেসে করেন না। সংগঠন করতে এসেছেন ব্যক্তিগত স্বার্থে। দক্ষিণ কলকাতায় যেভাবে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে, যেভাবে বুথের টাকায়...আর্থিক তছরুপ করা হয়েছে । কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করে দেওয়ার পরে রাজ্য পর্যন্ত এসেছে...রাজ্য থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে ২৩ দক্ষিণ কলকাতা লোকসভায় একটা আর্থিক তছরুপ হয়েছে।' 


বেহালা পশ্চিম মণ্ডল ৫-এর বিজেপি যুব মোর্চার পদত্যাগী মণ্ডল সভাপতি দিব্যেন্দু সামন্ত বলেন, 'পার্টির কিছু ব্যক্তিগত, ভিতরকার কারণে আমি ইস্তফা দিয়েছি। সেটা আমি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। সব দলে কিছু সৎ মানুষ থাকে, সব দলে কিছু অসৎ মানুষ থাকে। অবশ্যই দোষটা অসৎ মানুষদের দিকে।'


যদিও বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ বলছেন, 'তৃণমূল যখন রাজনৈতিকভাবে পারে না তখন অনেক কিছুই ভুলভাল অপপ্রচারের চেষ্টা করে। বিশেষ করে আমাদের যাঁরা কার্যকর্তা তাঁদের মধ্যেও আনার চেষ্টা করেছেন। তৃণমূলের প্ররোচনায় পা দিয়ে কেউ যদি কোনও পাবলিক কোনও স্টেটমেন্টে বা পাবলিক কোনও লেটার লিখে থাকেন, সেটা তৃণমূলের উস্কানিতেই পা দেওয়া।' 

এনিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, 'বিজেপির প্রায় প্রত্যেকটা মণ্ডল থেকেই অভিযোগ হচ্ছে যে, নির্বাচনের সময় টাকা নিয়ে তছরুপ করেছেন বিজেপিরই নেতা-নেত্রীরা। ইন্দ্রনীল নিজে বেনিফিসিয়ারি। উনি আবার কী বলবেন !'


 সূত্রের খবর, বিজেপির ৩ নেতা পদত্যাগপত্র পাঠালেও এখনও তা গ্রহণ করা হয়নি নেতৃত্বের তরফে।