কলকাতা: ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (Iswar Chanda Vidyasagar) নামে জন্মেছিলেন । কিন্তু শেষের নামটুকু একটা সময় বদলে হয়ে যায় ‘বিদ্যাসাগর’। গোটা বিশ্ব তাঁকে এই এক নামে চেনে সেইসময় বড় ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য়ে দিয়ে যাচ্ছিল ভারত। তাই বলা যায় বিদ্য়াসাগরের জীবন কেটেছে বেশ উত্তাল সময়ে। ঈশ্বরচন্দ্রের বাবা ছিলেন ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (Thakurdas Bandyopadhyay) ও তাঁর মায়ের ছিল ভগবতী দেবী (Bhagabati Devi)। তাঁর পারিবারিক পদবি বন্দ্যোপাধ্যায়, সে হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আসল নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।  তবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সই করতেন ‘ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা’ নামে।


ঈশ্বরচন্দ্রের বাল্য়কাল


পাঁচ বছর বয়সে পাঠশালায় ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র। পড়াশোনার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ থাকলেও দুষ্টুমিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। পাড়ার মানুষ তাঁর দুষ্টুমিতে অতিষ্ট হয়ে উঠতেন। কখনও কারও বাগানে ঢুকে ফল চুরি করে খাচ্ছেন, তো কখনও কেউ রোদে কাপড় শুকোতে দিলে তাতে ময়লা লাগিয়ে দিচ্ছেন। একবার যবের শিষ খেতে গিয়ে গলায় আটকে গেল যবের কাঁটা। একেবারে রে রে কাণ্ড।  অনেক কষ্টে গলায় আঙুল দিয়ে সেই কাঁটা বের করে দিলেন তাঁর ঠাকুরমা।


দুষ্টুমিতে সেরা হলেও লেখাপড়ায় কোনও ত্রুটি রাখতেন না ঈশ্বরচন্দ্র। আট বছর বয়স পর্যন্ত পাঠশালায় পড়াশোনা করার পর, পাঠশালার শিক্ষক কালীকান্ত ঠাকুরদাসকে বললেন, ঈশ্বরকে ইংরেজি শেখালে ভালো হয়।


আরও পড়ুন...


কখনও সৈনিক, তো কখনও সাংবাদিক-সাহিত্য়িক, দুখু মিয়া তাঁর জীবনজুড়ে তৈরি করেছিলেন একের পর এক গল্প


কিন্তু ঠাকুরদাসের ইচ্ছে ছিল না ছেলেকে ইংরেজি পড়ানোর। তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন ছেলেকে সংস্কৃত শেখাবেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল সংস্কৃতশাস্ত্রে পণ্ডিত হয়ে ছেলে গ্রামে গিয়ে একটা টোল খুলুক। অনেক চিন্তাভাবনার পর ছেলেকে তিনি সংস্কৃত কলেজেই (Sanskrit College) ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।


১৮২৯ সালের ১লা জুন, মাত্র নয় বছর বয়সে, সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হলেন ঈশ্বর। সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হওয়ার দেড় বছর পরে ১৮৩১ সালের মার্চ মাস থেকে ঈশ্বর মাসে পাঁচ টাকা বৃত্তি পেতে শুরু করেছিলেন। ১৮৪১ সালের ৪ ডিসেম্বর কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজের সার্টিফিকেট পেলেন ঈশ্বরচন্দ্র। সংস্কৃত কলেজে পড়ার সময়েই তাঁর নামের শেষে জুড়ে গিয়েছিল একটি উপাধি― বিদ্যাসাগর।


সংস্কৃত ভাষা ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ দক্ষতা ছিল ঈশ্বরচন্দ্রের। বিদ্যাসাগরকে বলা হয় বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন।


সমাজের রক্তচক্ষুর সঙ্গে মোকাবিলা করে বিধবা বিবাহের (Widow remarriage) প্রচলন করেছিলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়,  বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের ঘোর বিরোধী ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। তিনি আইন প্রণয়ন করে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১০ বছর করেন। 


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই কলকাতা শহরে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় বিদ্যাসাগরের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial