অরিত্রিক ভট্টাচার্য, রঞ্জিৎ হালদার ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: রাজ্যপালের (Bengal Governor) সই করা জোড়া কনফিডেন্সিয়াল চিঠির বিষয়বস্তু কী? কী রয়েছে নবান্ন ও দিল্লিতে পাঠানো চিঠিতে? উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সংঘাতের আবহে, তা নিয়েই জল্পনার স্রোত বইছে রাজ্য-রাজনীতিতে। তৃণমূলের দাবি, শিক্ষামন্ত্রীকে টার্গেট করে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে থাকতে পারেন রাজ্যপাল! (CV Ananda Bose) এই ইস্যুতে পাল্টা শাসকপক্ষের সমালোচনা করেছে  বিজেপি। (BJP) 


এ যেন স্যাটারডে সাসপেন্স! ইমেল-হোয়াটসঅ্যাপের জমানায় চিঠি-রহস্যে জমজমাট বঙ্গ রাজনীতি! আর তার সৌজন্যে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সেই সংঘাতের আবহেই শনিবার মধ্যরাতের কিছু আগে 'অ্যাকশন' নেন রাজ্যপাল! রাজভবন সূত্রের খবর, নবান্ন এবং দিল্লিতে পাঠানো দুটি কনফিডেন্সিয়াল চিঠিতে তিনি সই করেছেন। 


মুখবন্ধ খামে বন্দি এই জোড়া চিঠিই রাজ্য-রাজনীতিতে জন্ম দিয়েছে রহস্যের। কারণ, চিঠির বিষয়বস্তু কী? তা প্রকাশ্যে আসেনি। তাই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, শিক্ষাক্ষেত্র নিয়ে যেভাবে রাজ্য সরকার আর রাজভবনের মধ্যে চরম টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, সেই প্রসঙ্গের উল্লেখই রয়েছে কি রাজভবনের গোপনীয় চিঠিতে? এমনও জল্পনা উঠেছে যে রাজ্যপাল কি কাউকে নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে নালিশ জানিয়েছেন? এই প্রসঙ্গেই জল্পনা বাড়িয়ে তুলেছেন খোদ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, 'শিক্ষামন্ত্রী প্রতিবাদ করেছেন, তাই শিক্ষামন্ত্রীকে তিনি টার্গেট করে কিছু ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করতে পারেন বলে আমরা অনুমান করছি, কোনও ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে অক্সিজেন দেওয়া, গৈরিকীকরণের চেষ্টা করা, উপাচার্য নিয়োগের নামে বিজেপির স্বার্থসিদ্ধি করা, সিস্টেমটাকে বিশৃঙ্খলতা দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া, এইগুলো যে রাজ্যপাল করছেন, সেগুলো আমরা কোনও অবস্থাতেই সাধারণ কাজ হিসাবে দেখছি না। এটি বিজেপির পরিকল্পিত চিত্রনাট্যে কাজ করছেন।'


রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, 'রাজ্যপাল ঠিকই করছেন। কী চিঠি দিয়েছেন, সেটা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু, তাঁর সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী যে অসৌজন্য আচরণ করছে, তা নিয়ে ব্যবস্থা নিতেই পারেন।'


এর আগে জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকাকালীন বারবার রাজ্য ও রাজভবন দ্বন্দ্ব দেখেছিল বাংলা। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মতবিরোধ চরমে উঠেছিল। তারপর সিভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল হয়ে আসার পর একেবারে শুরুতে ছবিটা অন্যরকম ছিল। রাজ্য ও রাজভবনের মধ্যে সৌজন্যের ছবি দেখা গিয়েছিল বেশ কিছুটা সময়। কিন্তু তারপর আবার মাথাচাড়া দিয়েছে পুরনো ছবি। যত সময় গড়িয়েছে, রাজভবনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাতের গ্রাফ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এখন শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সংঘাত চরমে উঠেছে।


এদিকে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অর্থনৈতিক অবরোধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালকে কাঠগড়ায় রেখে বাছাই শব্দে আক্রমণ শানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। উল্টোদিকে নিজের অবস্থানে অনড় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিকে রাজ্য সরকার আর রাজভবনের এমন সংঘাতের অভিঘাতে আখেরে বাংলার সার্বিক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস আর সিপিএম। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'আমাদের সকলের ভাষা সংযম দরকার। শিক্ষামন্ত্রী তাঁরও ভাষা সংযম প্রয়োজন। রাজ্যপালেরও সংযম থাকার দরকার। এখন আনন্দ বোস আর বসুতে আমরা লড়াই দেখতে পাচ্ছি। দুজনেই নাকি শিক্ষিত, দুজনেই নাকি পণ্ডিত। দুজনেই নাকি শেক্সপিয়র, মিলটন কথায় কথায় বলে। তাঁদের মুখের ভাষা দেখে আমি-আপনি বুঝতেই পারছি,আগামী দিনে বাংলার ভবিষ্যৎ কোথায়।' কড়া সমলোচনা করেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য় সুজন চক্রবর্তী।


আরও পড়ুন: শহরে জমা জলের ইস্যুতে সরল ক্ষোভ, নিকাশি বিভাগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ফিরহাদ